ইতিহাস ও সভ্যতা

"ইতিহাস ও সভ্যতা" ফাইলটিতে ইতিহাস, প্রাথমিক উন্নয়নের ধারণা, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার ধারণা ও বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ফাইলটি ডাউনলোড করতে নিচের দিকে স্ক্রল করুন অতপর ডাউনলোড করুন।
প্রতিটা টপিক এর মূল বিষয়
ইতিহাসের ধারণা: ফাইলটিতে ইতিহাসকে মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যার অনুধাবন এবং মানুষের বিভিন্ন প্রথা-পদ্ধতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের উৎস ও প্রকৃতির বিশ্লেষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এটি মানুষের কার্যাবলীর বিশ্লেষণ, যা তার দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উভয় চাহিদাকে অন্তর্ভুক্ত করে। মানুষের জীবনধারণের সীমাব দ্ধতা সত্ত্বেও সে তার মেধা ও শ্রম দ্বারা রাজনৈতিক কাঠামো, ধর্মবিশ্বাস, আচার-প্রথা, ঐতিহ্য ইত্যাদির পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধন করেছে, যা ইতিহাস চর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
প্রাথমিক উন্নয়নের ধারণা: মানুষের প্রাথমিক উন্নয়ন মূলত তার বেঁচে থাকার প্রয়োজন, আইন-শৃঙ্খলার প্রয়োজন, সামাজিক সংগঠনের প্রয়োজন, জ্ঞান ও শিক্ষার প্রয়োজন, আত্মপ্রকাশের প্রয়োজন এবং ধর্মীয় ধারণা সৃষ্টির প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে হয়েছে। শিকারি যাযাবর জীবন থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজে রূপান্তর, বিভিন্ন শাসন কাঠামোর উদ্ভব (যেমন পিতৃতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক), সামাজিক শ্রেণীবিভাগ (যেমন বর্ণপ্রথা), জ্ঞান অর্জন ও লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন, এবং শিল্পকলা ও ধর্মের বিকাশ মানুষের প্রাথমিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
সংস্কৃতির ধারণা: সংস্কৃতিকে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার মধ্যে সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক কার্যক্রম, আইন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ধর্ম এবং দর্শন অন্তর্ভুক্ত। এটি মানুষের বিচারবুদ্ধি ও চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। সংস্কৃতির বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটে পারস্পরিক আদান-প্রদান, আবিষ্কার এবং ভৌগোলিক ও জাতিগত প্রভাবের মাধ্যমে। সংস্কৃতি স্থবির নয়, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর রূপান্তর ঘটে, যদিও এই প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে।
সভ্যতার ধারণা ও বিকাশ: সভ্যতার ধারণা নগর পত্তন, উন্নততর জীবনব্যবস্থা, লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকারব্যবস্থা, বাণিজ্য এবং সুস্পষ্ট ধর্মীয় দর্শনের উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিকশিত হয়। এটি মূলত মানুষের মেধা প্রয়োগ ও সৃষ্টিশীলতার উন্মোচন। বিভিন্ন পণ্ডিত সভ্যতাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, তবে মূল কথা হলো এটি মানুষের সার্বিক অগ্রগতি ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশ। সভ্যতার বিকাশ প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষের প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে ঘটে।
সভ্যতার উদ্ভব প্রসঙ্গে বিভিন্ন মতবাদ: ফাইলটিতে সভ্যতার উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ আলোচনা করা হয়েছে:
আবহাওয়া ও জলবায়ু: এলসওয়ার্থ হান্টিংটন, এরিস্টটল এবং মন্টেস্কু মনে করেন, অনুকূল জলবায়ু সভ্যতা বিকাশে সহায়ক, আবার প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করেও সভ্যতা গড়ে উঠতে পারে (যেমন মিশরীয় সভ্যতা)। তবে এই মতবাদ সর্বজনীন নয়, কারণ জলবায়ু অপরিবর্তিত থাকলেও সভ্যতা ধ্বংস হতে পারে।
ভূপ্রকৃতি: টমাস বাকল এবং কার্ল রিটার ভূপ্রকৃতির বৈচিত্র্যকে সভ্যতা বিকাশের অন্যতম নিয়ামক বলেছেন। পর্বত, বনভূমি, সমভূমি, নদী এবং সমুদ্রের প্রাচুর্য যোগাযোগ, বসতি স্থাপন ও বাণিজ্য বিকাশে সহায়ক হয়। তবে এটিও বিতর্কমুক্ত নয়, কারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূপ্রকৃতি থাকা সত্ত্বেও অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে।
যাযাবরদের হাতে গড়ে ওঠা সভ্যতা: এ. এল. ওপেনহেইমার মনে করেন, যাযাবর গোষ্ঠীই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কৃষিভিত্তিক স্থায়ী জীবন গড়ে তোলে এবং প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করে সভ্যতার সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটায়। তবে সমালোচকরা মনে করেন, নগর সভ্যতা গড়তে যাযাবরদের ভূমিকা ততটা প্রত্যক্ষ নয়, বরং কৃষিভিত্তিক গ্রাম সমাজের মানুষই নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে।
সভ্যতা প্রাকৃতিক নিয়মে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে ওঠে: নিকোলাই দানিলেভস্কি এবং ওসওয়ান্ড স্পেংলার মনে করেন, সভ্যতা প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্ম নেয়, বিকাশ লাভ করে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। জিওভান্নি ভিকো আধ্যাত্মিক প্রেরণার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ব্রুক এডামস এবং পিতিরিম সরোকিন মনে করেন, সভ্যতার স্রষ্টা মানুষ, প্রকৃতি নয় এবং বস্তুবাদী চিন্তা ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাই সভ্যতা বিকাশে ভূমিকা রাখে।
প্রতিবন্ধকতা ও মোকাবিলা তত্ত্ব: আর্নল্ড জে. টয়েনবি এই মতবাদটি উত্থাপন করেছেন। তাঁর মতে, মানুষ প্রতিকূল পরিবেশের কঠোরতা মোকাবিলা করতে গিয়েই সভ্যতা গড়ে তুলেছে। প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বাধা অতিক্রম করার জন্যই মানুষ নতুন প্রথা-পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছে। তিনি পাঁচটি প্রেরণার কথা বলেছেন: রুক্ষ প্রকৃতির প্রতিবন্ধকতা, নতুন ভূমি, আকস্মিক দুর্যোগ, দায়মুক্তি এবং চাপ মোকাবেলা। এই তত্ত্বটি বহুলভাবে গৃহীত হলেও এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
সভ্যতা পতনের কারণ: সভ্যতার উত্থান, বিকাশ এবং পতন একটি অবধারিত সূত্র। বিকাশের চূড়ান্তে পৌঁছার পর সভ্যতা নিঃশেষিত হয়ে যায় এবং এর শক্তি অবক্ষয় হয়। অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব, জনঅসন্তোষ, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উদ্ভাবনের সীমাবদ্ধতা এবং প্রাকৃতিক কারণ (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর গতি পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ) সভ্যতা পতনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
সবশেষে, ফাইলটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সভ্যতার উৎপত্তির কারণ কোনো একটি সুনির্দিষ্ট সূত্রে ফেলে শনাক্ত করা সম্ভব নয়, কারণ সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের লক্ষণ পরিবর্তনশীল এবং পরিবেশগত মিলের কারণে কিছু ঐক্য দেখা যেতে পারে।