কাজ ৩: টেকসই উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক আলোচনা ও উপস্থাপনা (৬০ মিনিট)
ধাপ ৬: টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ কেনো প্রয়োজন তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করবে।
ধাপ ৭: টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজস্ব পরিমণ্ডলে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা নিয়ে দলে আলোচনা এবং উপস্থাপন করবে।
কাজের বিবরণী:
- শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে টেকসই উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
বিষয়গুলো হল:
১. বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
২. ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উপায়
৩. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব পরিমণ্ডলে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে
১। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:
টেকসই উন্নয়নের ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা বা মানদন্ড আছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ অন্যতম। শুধু বাংলাদেশ একাকি চেষ্টা করলে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সম্ভব না। আধুনিকায়নের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। কোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমি রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য দেশেও প্রাকৃতিক সম্পদ হুমকির মুখে। তাই টেকসই উন্নয়নে সকলদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
২। ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উপায়:
বৈশ্বিক সহযোগিতা: প্রাকৃতিক সম্পদসংরক্ষণের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্য এবং অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করা এবং একে অপরের সাথে শেয়ার করা প্রয়োজন।
সম্পদের পুনঃব্যবহার: কোনো জিনিসকে পুনরায় ব্যবহার করে আমরা বর্জ্য কমাতে পারি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি। কোনো জিনিসকে রিসাইকেল করা বা ফেলে দেওয়ার পূর্বে তা বারবার ব্যবহার করা উচিত। কোনো জিনিস ভেঙ্গে গেলে তা ফেলে না দিয়ে বা নতুন ক্রয় না করে মেরামতের চেষ্টা করা উচিত।
সম্পদের ব্যবহার কমানো: প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের একটি ভালো উপায় হচ্ছে তা ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া। শক্তির ব্যবহার কমিয়ে বা বর্জ্য উৎপাদন কমিয়ে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।
সম্পদের রিসাইকেল করা: সম্পদের রিসাইকেলের ফলে একই জিনিস বারবার ব্যবহার করা যাবে। যেমন- পুরাতন কাগজ রিসাইকেলের মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য কাগজে পরিণত করলে; কাগজ তৈরি করার জন্য গাছ কাটার পরিমাণ কমবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার: মানুষ প্রধানত অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এগুলো একবার ব্যবহারেই নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- সূর্যের আলো, বায়ুপ্রবাহ এবং পানির স্রোত আমাদের ব্যবহার করতে হবে।
অভ্যাসের পরিবর্তন: প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অভ্যাসের পরিবর্তন করা। অপ্রয়োজনে বাতি জ্বালিয়ে না রেখে আমরা শক্তির ব্যবহার কমাতে পারি। কাগজের উভয় পৃষ্ঠাতে লিখে আমরা কাগজের অপচয় কমাতে পারি। আমরা ব্যবহৃত কৌটা বা পুরাতন অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র রিসাইকেল করে নতুন জিনিসপত্র তৈরি করতে পারি।
৩। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা নিজস্ব পরিমন্ডলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারি-
১। গাছ লাগানো ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সাথে যুক্ত হতে পারি।
২। সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
৩। জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
৪। বিদ্যুৎ ও জল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া।
৫। সমাজে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করা।
৬। ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ করা।
৭। রিসাইক্লিং ও কমপোস্টিং এর মাধ্যমে বর্জ্য কমানো।
৮। সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করতে পারি।
৯। প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
১০। পরিবেশ বান্ধব জীবনযাপন করা।
১১। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার প্রসার ঘটানো।
১২। পরিবেশ দূষণকারী কার্যকলাপ এড়ানো।
১৩। অতিরিক্ত সার, কীটনাশক কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার না করা।