১ম অধ্যায় - ফসলের ডাক
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন
প্রশ্ন-১: আমাদের দেশে কোন কোন মাটিতে ধান চাষের ফলন ভালো হয়?
উত্তর: এঁটেল ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে।
প্রশ্ন-২: আলু চাষের জন্য কেমন প্রকৃতির মাটি দরকার?উত্তর: নরম ও ঝুরঝুরে প্রকৃতির মাটি আলু চাষের জন্য দরকারী।
প্রশ্ন-৩: পাট চাষের জন্য উপযোগী মাটি কোনটি?
উত্তর: দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি।
তোমাদের এলাকায় যেসব ফসল বা উদ্ভিদ ভালো জন্মায় তাদের নাম
আমার পাওয়া তথ্য | বন্ধুদের কাছ থেকে নতুন যা জানলে |
---|---|
দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি বিশিষ্ট আমাদের এলাকায় যেসব ফসল বা উদ্ভিদ ভালো জন্মায় তাদের নামের তালিকা নিচে দেওয়া হলো- রোপা আমন, রোপা আউশ, বোনা আমন, গম, আখ, পাট, পিয়াজ, রসুন, টমোটো, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ভুট্টা, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, কলা, লিচু, কাঁঠাল, জাম, আম, মুগ, মাসকালাই, মরিচ, শালগম, গাজর, পেঁপে, আদা, সরিষা, বেগুন, বরবটি ইত্যাদি। | পাহাড়ি ও পাদভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত আমার বন্ধুদের এলাকায় যেসব ফসল বা উদ্ভিদ ভালো জন্মায় তাদের নামের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো- পাহাড়ি ও পাদভূমি অঞ্চল: বোনা আউশ, রোপা আউশ, রোপা আমন, আখ, সরিষা, মসুর, ছোলা, পাট, গম ইত্যাদি। উপকূলীয় অঞ্চল: সরিষা, মুগ, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, মুলা, বেগুন, শিম, টমেটো, ভুট্টা, চিনাবাদাম, তরমুজ, আনারস বাঙ্গি ইত্যাদি। |
অতিথি শিক্ষকের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নিচের ছক পূরণ করো
প্রশ্ন: এর বাইরেও অতিথি শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপর্ণ তথ্যগুলো নিচে নোট করে রাখতে পার।
উত্তর: পোকামাকড়ের পাশাপাশি আগাছাও ফসলের শত্রু। পোকামাকড়ের সাথে সাথে আগাছাও ফসল নষ্টের জন্য প্রায় ৪০ শতাংশ দায়ী। এজন্য ফসল বা উদ্ভিদ চাষের সময় নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। যদি আগাছা দমন না করা যায় তাহলে ফসল বা উদ্ভিদের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন
প্রশ্ন: এই যে বিভিন্ন জাতের ফসল আমরা ফলাই সেগুলে কোথা থেকে আসে?
উত্তর: বিভিন্ন জাতের যেসব ফসল আমরা ফলাই সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ে অভিযোজিত পরিবেশে উর্বর কৃষিজমি থেকে আসে।
প্রশ্ন: হরিপদ কাপালী নতুন ধানের জাত কীভাবে খুঁজে পেলেন? যে প্রক্রিয়ায় তিনি নতুন ধানের জাত আবিষ্কার করলেন তার ধাপগুলো কী কী?
উত্তর: হরিপদ কাপালী তার ফসলি জমিতে লাগানো ইরি ধানের কিছু গাছ তুলনামূলক বড় এবং বেশি ফলন হওয়া লক্ষ্য করলেন। তিনি এ ধানগুলো অন্য ধানের সাথে না মিশিয়ে আলাদাভাবে বীজ বপন করে উচ্চ ফনলশীল কি না পরীক্ষা করলেন। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেল, ধানগুলো আকারে বেশ বড় এবং ফলন বেশি হয়। এ ফলাফলে তিনি একটি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের ধারণা পেলেন। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি অনুসন্ধানের মাধ্যমে হরিপদ কাপালী নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত খুঁজে পেলেন। নতুন ধানের জাত আবিষ্কারে তাঁর অনুসরণের ধাপগুলো হলো-
১। পর্যবেক্ষণ
২। প্রশ্নকরণ
৩। সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানো
৪। পরীক্ষণ
৫। ফলাফল বিশ্লেষণ
প্রশ্ন: আমাদের চারপাশে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় জীবনের বৈশিষ্ট্য আলাদা হয় কেন?
উত্তর: আমাদের চারপাশে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় জীবন বিদ্যমান রয়েছে। এ সকল জীবনের বৈশিষ্ট্য ও গঠন ভিন্ন ধরনের হয়। জীবসমূহ বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের যাবার সময় কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটতে ঘটতে একপর্যায়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যের নতুন জীব দেখা যায় যা আদিপুরুষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন জীবনের মধ্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়। এই বৈচিত্র্য পরিবেশগত, প্রজাতিগত এবং জিনগত কারণে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় যে উদ্ভিদের ফলন ভালো হয়, কেন অন্য পরিবেশে তা অত ভালো ফলন দেয় না?
উত্তর: আমাদের এলাকার যেসব উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তা অন্য পরিবেশে অত ভালো ফলন দেয় না। কারণ আমাদের এলাকার আবহাওয়া জলবায়ু, মাটির গঠন প্রকৃতি, পানির প্রাপ্যতা, মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা, মাটির উর্বরতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যসমূহের কারনে যে সকল উদ্ভিদ ভালোভাবে অভিযোজিত হয় সেগুলো অধিক ফলন দেয়। কিন্তু এ সকল উদ্ভিদকে অন্য অঞ্চলে রোপন করলে আশানুরূপ ফলন দেয় না। কারণ নতুন পরিবেশে সঠিকভাবে অভিযোজন করতে সক্ষম না হওয়ায় উদ্ভিদটিকে টিকে থাকতে পারে না। আর যদি টিকেও থাকে তাহলে বৃদ্ধি ও ফলন কম হয়।
প্রশ্ন: জীববৈচিত্র্যের স্বরূপ কেমন?
উত্তর: পৃথিবীর বিভিন্ন জীবের মধ্যে বিরাজমান বিচিত্রতাকে জীববৈচিত্র বলে। জীববৈচিত্র প্রজাতিগত, জিনগত এবং পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। পৃথিবীতে বিদ্যমান বিভিন্ন জীবনের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন নানা রকম বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জীবগোষ্ঠী তার পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নানারকম বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। এই বাস্তুতন্ত্র ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে যেমন: স্থলজ, জলজ, মরুজ, তৃণভূমি, সামুদ্রিক প্রভৃতি। প্রতিটি বাস্তুতন্ত্রের বসবাসকারী জীবনের বৈচিত্র্য আলাদা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য একইভাবে দেখা যায় না। কোনো অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য বেশি হয় আবার কোনো অঞ্চলে কম হয়। জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে পরিবেশের গঠন প্রকৃতিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অত্যাধিক জীববৈচিত্র্য দেখা গেলেও বরফাবৃত অঞ্চলে কম জীববৈচিত্র্য প্রত্যক্ষ করা যায়।
প্রশ্ন: বিভিন্ন জীবের মধ্যকার এই বৈচিত্র্যের উদ্ভব কীভাবে ঘটে?
উত্তর: বিভিন্ন জীবের মধ্যকার এই বৈচিত্র্যের উদ্ভব জিনগত, পরিবেশগত এবং প্রজাতিগত কারণে ঘটে থাকে। প্রতিটি জীবের বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় এক বংশ থেকে অন্য বংশে স্থানান্তরিত হয়। কোনো কারণে বংশগতি উপাদানের মধ্যে পরিবর্তন ঘটলে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবের সৃষ্টি হয়। ফলে জীবের মধ্যে বিচিত্রতা দেখা যায়। এছাড়া পরিবেশের বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদানের পরিবর্তনের কারণে জীবের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কী ধরনের জীববৈচিত্র্য দেখা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, উর্বর মাটি, বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে পর্যাপ্ত সূর্যালোক, অধিক বৃষ্টিপাত আর সবুজ প্রকৃতি বিরাজ করে যা এদেশে জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য গড়ে ওঠে। আবার এদেশে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলগুলোর অবস্থানগত কারণে জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধশালী। বাংলাদেশের বনাঞ্চলে প্রায় ৫০০০ এর অধিক সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এছাড়া ১৩২ প্রাজাতির স্তন্যপায়, ৫৭৮ প্রাজাতির পাখি, ১৫৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৯ প্রজাতির উভয়চর জীব শনাক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন: জীববৈচিত্র্য কখন ঝুঁকির মুখে পড়ে, আর তার প্রতিকারই বা কীভাবে করা যায়?
উত্তর: মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়ে। মানুষ নগরায়ণ, খাদ্য ও বাসস্থানের সংস্থান, রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রভৃতির জন্য অধিকহারে বনাঞ্চল ধ্বংস করছে। ফলে জীবনের নিরাপদ আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে। শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য নিম্ন জলাভূমি ভরাট, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ ও জলবায় পরিবর্তনজনিত কারণে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
জীববৈচিত্র্য ঝুঁকি প্রতিকারে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো হলো-
১। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২। পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হবে।
৩। বনাঞ্চল সংরক্ষণে পাশাপাশি বেশি বেশি গাছ রোপণ করতে হবে।
৪। নির্বিচারে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করতে হবে।
৫। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সংরক্ষণের পাশাপাশি জীবনের নিরাপদ বাসস্থানের জন্য অভয়ারণ্য বা সংরক্ষিত এলাকা চিহ্নিত করতে হবে।
৬। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তজার্তিক সংস্থাকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ভূমিকা রাখতে হবে।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেশন
এখন তোমাদের এলাকার যেসব ফসল বা উদ্ভিদের কথা তোমরা আগে আলোচনা করেছ, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য আবার ভেবে দেখো। তোমাদের মাটি বা পরিবেশের কোন ধরনের বৈশিষ্ট্য এসব উদ্ভিদকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে? দলে আলোচনা করে তার ভিত্তিতে পরের পৃষ্ঠায় নোট নাও-
তোমার নির্বাচিত ফসল/উদ্ভিদের নাম: বেগুন
প্রশ্ন: ফসলের মাঠ/নার্সারি/ছাদ বাগানে কাজ করতে তোমাদের কেমন লেগেছে?
উত্তর: ফসলের মাঠ/নার্সারি/ছাদ বাগানে কাজ করতে আমার অনেক ভালো লেগেছে। সাথে এটাও বুঝতে পেরেছি। আমাদের দেশের কৃষকের অনেক পরিশ্রম করেন। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আমরা প্রতিদিন খাবার খেতে পারি।
প্রশ্ন: এ কাজে তোমরা নতুন কী কী শিখেছ?
উত্তর: এই কাজের মাধ্যমে আমরা নতুন অনেক কিছু শিখেছি। পাটের চাষ করা শিখেছি। কিভাবে পরিচর্যা করে পাটের ফলন ভালো পাওয়া যায় তা শিখেছি। পাটের বিভিন্ন আগাছা আক্রমণ করে, সেটাও জেনেছি। পাট গাছের ছাল থেকে কিভাবে পাটের আঁশ সংগ্রহ করতে হয়, সেটা শিখেছি।