কল্পবিজ্ঞানের গল্প!
প্রথম সেশনঃ
■ নিজেরা বই প্রকাশ করার আগে একটা ছোটখাটো বইমেলার আয়োজন করলে কে হয়? শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে এই অভিজ্ঞতার প্রথম সেশনে তোমরা ক্লাসেই একটা বইমেলার আয়োজন করে ফেলতে পারো। তোমাদের বাড়িতে যেসব সায়েন্স ফিকশন বই, ম্যাগাজিন আছে এদিন স্কুলে নিয়ে আসবে। সুন্দর করে নিজের নাম লিখে সেটি কয়েকটি বেঞ্চ অথবা টেবিল পাশাপাশি লাগিয়ে বইগুলোকে সাজিয়ে রাখো যাতে সবাই সবার বই দেখতে পারে। ঘুরে ঘুরে অন্যদের বই দেখো, কী কী বিষয়ের উপর বই আছে, তোমার পছন্দের কোন কোন লেখকের বই দেখছ, সেটা নিয়ে বন্ধুদের সাথে গল্পও করতে পারো।
■যদি সম্বব হয়, শিক্ষক বা অভিভাবকের সাথে তোমাদের বিদ্যালয়ের অথবা জেলা/উপজেলা গ্রন্থাগারে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বই দেখবে, পড়বে। যদি সেখানে কোনো ম্যাগাজিন থেকে থাকে তাহলে সেগুলোও নড়াচাড়া করে দেখবে। বই বা ম্যাগাজিনের বিষয়বস্তু কী, কীভাবে লিখেছে, ভেতরে লেখা ও ছবি কীভাবে সাজিয়েছে সেসব খুব মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে ।
■ এবার শ্রেণিকক্ষে বন্ধুদের সাথে বসে চিন্তা করে দেখো, একটা বই প্রকাশের ধাপগুলো কী কী? প্রতিটি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা উল্টালেই হাতের বামে 'প্রিন্টার্স লাইন' এর জন্য এক পৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকে। এখানে দেখবে বই প্রকাশের পেছনে যারা মূলত থাকেন, যেমন- লেখক, আঁকিয়ে, প্রকাশক, স্বত্বাধিকারী; তাদের নামধাম লেখা থাকে। এর বাইরেও একটা বই ছাপা হওয়ার আগে প্রুফ দেখা, সম্পাদনা, বাঁধাই ইত্যাদি আরও অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। বিভিন্ন বইয়ের প্রিন্টার্স লাইন দেখে, কিংবা শিক্ষকসহ অন্যদের সহায়তা নিয়ে বই প্রকাশের জন্য কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হয় তার একটি তালিকা তৈরি করো। সবচেয়ে ভালো হয় এমন কারোর সাক্ষাৎকার নিলে যিনি বই প্রকাশনা কাজের সঙ্গে যুক্ত। এমন কাউকে যদি খুঁজে পাও কিংবা কোনো গ্রন্থাগারিক যিনি বই সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন, তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো কীভাবে বই বা ম্যাগাজিনে অনেকজন মিলে লেখা যায়, কীভাবে সম্পাদনা করতে হয়, প্রুফ দেখতে হয়, প্রচ্ছদ তৈরি ও বাঁধাই শেষে কীভাবে বই প্রকাশ করা হয়।
■ তাছাড়াও কোনো নির্দিষ্ট বই কেন ভালো লাগে বা বইয়ের কী ভালো লাগে তা নিয়ে তোমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলো। অন্য বন্ধুর কাছ থেকেও শুনে নাও কোনো নির্দিষ্ট বই কেন তার পছন্দের। নিজেদের বই প্রকাশের সময় এই বিষয়গুলোও মাথায় রাখা জরুরি।
■ এবার একটু চিন্তা করে দেখো সায়েন্স ফিকশন গল্প বা বইয়ের বিষয়বস্তু সাধারণত কী ধরনের হয়, এই ঘুরানোর গল্প কোন ধরনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়। বন্ধুদের সাথে আলাপ করে দেখো তাদের কী ধারণা।
■ তোমার যদি অন্য বন্ধুর কোনো বই পড়তে ইচ্ছা করে তাহলে তার অনুমতি নিয়ে বইটি ধার নাও। তোমার নিজের বই যদি অন্য কেউ পড়তে চায় তাহলে তাকেও দিতে পারো। এভাবে নিজেদের মধ্যে বই বিনিময় ও বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা শেষ করে ফেলো প্রথম সেশনে।
বাংলা ভাষায় তো বটেই, গোটা ভারতবর্ষে প্রকাশিত প্রথম দিককার কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মধ্যে একটি হল 'পলাতক তুফান' (প্রথম প্রকাশ ১৮৯৬ সালে)। লেখকের!
দ্বিতীয় সেশনঃ
■ প্রথম সেশনের পর তোমাদের নিশ্চয়ই বই বা ম্যাগাজিন প্রকাশনা সম্পর্কে একটা ধারণা হয়েছে। এবার নিজেদের কাজে হাত দেওয়ার পালা। তোমাদের নিজেদের লেখা সায়েন্স ফিকশন গল্প নিয়ে একটা বই প্রকাশিত হবে। সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞানের গল্প উপন্যাসের বিষয়গুলো কেমন হয় সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই কিছু ধারণা ইতোমধ্যে পেয়েছ। তোমাদের গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে তোমরা এমন অনেক কিছুই বেছে নিতে পারো। ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হবে, মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী, টাইম মেশিনে চেপে অতীত বা ভবিষ্যতে চলে গেলে কেমন হতো, এসব নিয়ে গল্পের আইডিয়া ভাবতে পারো। এমনকি ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনও হতে পারে তোমার গল্পের বিষয়বস্তু। তবে একটা শর্ত আছে। সেটা হলো, কল্পবিজ্ঞান হলেও তাতে যৌক্তিকতা থাকতে হবে। অর্থাৎ তোমার গল্প কাল্পনিক হলেও তাতে রূপকথার গল্পের মতো চাইলেই পঙ্খীরাজ ঘোড়া বা দুই মাথার দৈত্য এনে হাজির করা যাবে না। কল্পবিজ্ঞান হলেও গল্প লেখার সময় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
■ যেহেতু ক্লাসের সবাই মিলে বইটি প্রকাশ করবে তাই প্রত্যেকের অংশগ্রহণ থাকা জরুরি কাজটা গুছিয়ে করতে প্রথমেই নিজেদের মধ্যে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও। এবার ছক-১ এ তোমার দলের সদস্য কারা কারা তা লিখে ফেলো।
■ দলের সবাই মিলে আলোচনা করে তোমার দলের একটা নাম ঠিক করে নাও। কে কী ধরনের কাজ করবে (যেমন- লেখালিখি, ছবি আঁকা, অলঙ্করণ ইত্যাদি) তার ভিত্তিতে ছক-১ এ কাজের কলামটি পূরণ করো।
নমুনা উত্তর :ছক- ১
দলের নাম |
সদস্যের নাম |
কাজ |
পদ্মা |
আমিনুল |
গল্প লিখবে। |
রফিক |
ছবি আঁকবে। |
|
ফাতেমা |
প্রচ্ছদ অলঙ্করণ করবে। |
|
মেঘনা |
হাসান |
প্রচ্ছদ অলঙ্করণ করবে। |
শারমিন |
ছবি আঁকবে। |
|
আইমান |
গল্প লিখবে |
■ সব দলের প্রতিনিধির সমন্বয়ে আবার একটি আলাদা কমিটি থাকতে হবে। যাদের কাজ হবে পুরো বইটি সম্পাদনা করা। সম্পাদনা মানে বুঝতে পেরেছ? এই দলের কাজ হবে সবগুলো দলের লেখা জমা হওয়ার পর সেগুলোকে ঠিকঠাক করা, ক্রমানুযায়ী সাজানো, প্রুফ অর্থাৎ বানানজনিত ভুলত্রুটি শুদ্ধ করা; মানে সব দলের লেখাগুলো জড়ো করে একটা পূর্ণাঙ্গ বইয়ের রূপ দেওয়া এবং ভুলত্রুটি ঠিক করা। একইভাবে একটা প্রকাশনা কমিটি থাকবে যারা প্রচ্ছদ, আঁকা, ছাপা, বাঁধাই ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করে বইটির চূড়ান্ত রূপ দেবে । এই সম্পাদনা ও প্রকাশনা কমিটিতে সবগুলো দল থেকে একজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবে।
■ নিজ দলের সবাই মিলে ভোট করে নির্বাচন করে নাও সম্পাদক ও প্রকাশক ১৯০১ সালে বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক এইচ. জি. কমিটিতে তোমাদের দল থেকে কোন কোন সদস্য থাকবে। এভাবে প্রত্যেক ওয়েলস লিখেছিলেন এই বই, ‘চাঁদের বুকে প্রথম দলের একজন করে সম্পাদক প্রতিনিধি মিলে একটি সম্পাদনা কমিটি এবং মানুষ'। তখন কাল্পনিক মনে হলেও এখন আমরা একইভাবে একজন করে প্রকাশক প্রতিনিধি মিলে একটি প্রকাশনা কমিটি জানি যে এই বই প্রকাশের অনেক বছর পর মানুষ নির্বাচন করে নাও।
নমুনা উত্তর : আমাদের দল থেকে যেসব সদস্য সম্পাদক ও প্রকাশক কমিটিতে দায়িত্ব পালন করবে তাদের নামের তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
সম্পাদক কমিটি |
প্রকাশক কমিটি |
১. এনামুল হক |
১. আল আমিন |
২. আবদুর রহিম |
২. রফিকুল ইসলাম |
৩. সিরাজুল ইসলাম |
৩. জামাল হোসেন |
৪. রবিউল হক |
৪. আবদুল খালেক |
৫. ইজাজ আহমেদ |
৫. আবদুল গণি |
৬. ইলিয়াস হোসেন |
৬. রুবিনা আক্তার |
৭. খায়রুল ইসলাম |
৭. আবদুস সাদেক |
৮. আমেনা খাতুন |
৮. নাসরিন সুলতানা |
৯. শহীদুল হক |
৯. রাব্বি মিয়া |
১০. আমিনুল ইসলাম |
১০. শরীফুল ইসলাম |
* সব দলের প্রতিনিধির সমন্বয়ে প্রত্যেক দল থেকে একজন করে সম্পাদক প্রতিনিধি মিলে। ম্পাদনা কমিটি নির্বাচিত করা হলো-
দলের নাম |
বরই |
আপেল |
কমলালেবু |
ডালিম |
সম্পাদক প্রতিনিধির নাম |
এনামুল হক |
আবদুল করিম |
আশরাফ আলী |
রেহানা আক্তার |
পদের নাম |
সভাপতি |
সহ-সভাপতি |
সদস্য সচিব |
দপ্তর সম্পাদক |
* সব দলের প্রতিনিধির সমন্বয়ে প্রত্যেক দল থেকে একজন করে প্রকাশক প্রতিনিধি মিলে একটি প্রকাশনা কমিটি নির্বাচিত করা হলো-
দলের নাম |
জবা |
গোলাপ |
জুই |
হাসনাহেনা |
প্রকাশক প্রতিনিধির নাम |
আল আমিন |
শাহাদাত হোসেন। |
আবুল কালাম আজাদ |
সাইফুল আলম |
পদের নাম |
সভাপতি |
সহ-সভাপতি |
সদস্য সচিব |
দপ্তর সম্পাদক |
■ এইবার শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নাও কী এবং কীভাবে করতে হবে। শিক্ষক তোমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সায়েন্স ফিকশনের গল্প-উপন্যাস পড়তে এবং সিনেমা অথবা তথ্যচিত্র দেখতে বলবেন, সেগুলো তোমরা সম্ভব হলে নিজ উদ্যোগে পড়ে নেবে।
■ এছাড়াও প্রথম সেশনে তোমরা। দের মধ্যে যে বইগুলো আদান-প্রদান করেছ, সেগুলো নিয়ে আরেকবার আলোচনা করে নিতে পারো।
■ সম্পাদক ও প্রকাশক কমিটি অন্যদের সাথে আলোচনা করে বই প্রকাশের বিভিন্ন ধাপের ডেডলাইন ঠিক করে নাও। তারিখগুলো টুকে নাও ছক-২ এ।
নমুনা উত্তর :ছক-২
ধাপ |
শেষ তারিখ |
মন্তব্য |
লেখাগুলো একত্রিত করা |
30/03/20.... |
গল্পের জন্য লেখাগুলো কয়েকজন লিখবে। সবার লেখা সম্পূর্ণ হলে একত্রিত করতে হবে। |
ক্রমানুযায়ী
সাজানো |
১৫/০১/২০...... |
লেখাগুলো একত্রিত করে ক্রমানুযায়ী সাজানোর পর টাইপ বা কম্পোজ করতে হবে। |
বানানজনিত ভুল শুদ্ধ করা |
১৮/০১/২০...... |
কম্পোজ শেষ হলে প্রিন্ট উঠিয়ে বানানজনিত ত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রুফ দেখে তা সংশোধন করতে হবে। |
প্রচ্ছদ আঁকা |
২০/০১/২০..... |
বইয়ের জন্য একটি কভার প্রচ্ছদ অঙ্কন করতে হবে। |
ছাপা |
২৫/০১/২০...... |
উপরের কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার জন্য বই প্রকাশের জন্য ছাপা থানায় পাঠাতে হবে। |
বাঁধাই করা |
৩০/০১/২০.... |
সম্পূর্ণ ছাপা শেষ হয়ে গেলে বাঁধাই থানায় ভালোভাবে বাঁধাই করতে হবে। |
বাড়ির কাজ
■ কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখা শুরু করার আগে গল্পের আইডিয়া তো পেতে হবে। সেজন্য তোমাদের সাহায্য করবে 'অনুসন্ধানী পাঠ' বইয়ের পৃথিবী ও মহাবিশ্ব অধ্যায়টি। মহাবিশ্বের সৃষ্টি কীভাবে হলো, মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরি, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, ব্ল্যাকহোল, বিগ ব্যাং এসব নিয়ে অনেক নতুন নতুন কথা জানতে পারবে এই অধ্যায় থেকে। আর এসব নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে গল্পের আইডিয়াও মিলে যেতে পারে। আর যেহেতু শুরুতেই বলা হয়েছে যে, বৈজ্ঞানিক তথ্যের ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দেয়া যাবে না, কাজেই কিছু কিছু বিষয় আগেভাগেই জেনে নিলে ভালো। বাড়ির কাজ হিসেবে পরের সেশনের আগেই এই অধ্যায়টি মনোযোগ দিয়ে পড়ে আসবে।
নমুনা উত্তর : কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখা শুরু করার আগে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সঠিক তথ্য সম্বলিত একটি গল্পের আইডিয়া তুলে ধরা হলো-
অজানা রহস্য
ব্ল্যাকহোল |
বিংশ শতাব্দীর জোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশের ছায়াবৃত অঞ্চলগুলো গবেষণা করে বৃহৎ নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। এগুলো কৃষ্ণ বর্ণের মতো দৃশ্যত হওয়ায় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবর নামকরণ দেওয়া হয়। এই কালো গহ্বরগুলোর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রবল যে, আলো ও অন্য কোনো বস্তু এর মধ্যে প্রবেশ করলে আর বেরিয়ে আসে না। মহাকাশে এই কালো গহ্বরগুলোর অস্তিত্ব সন্ধানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন, পরগুলো সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি ভরসম্পন্ন ধ্বংসাবশেষ। মহাকাশের দুটি বিপরীতধর্মী শক্তির ফলে তারকার আকার স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে। এ দুটি বিপরীতধর্মী শক্তি হলো প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে সংঘটিত প্রসারণ শক্তি এবং প্রবল মহাকর্ষ শক্তির কারণে সংঘটিত সংকোচন শক্তি । নক্ষত্রের মধ্যস্থিত উপাদানকে প্রসারিত ও সংকুচিত করে স্বাভাবিক আকার বজায় রাখতে এ দুটি শক্তি ভূমিকা রাখে। একসময় কেন্দ্রসহ উত্তাপের হ্রাস প্রাপ্তির সাথে সাথে তারকাটির জ্বালানি নিঃশেষ হয়। ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল হয়। ফলে ধীরে ধীরে তারকাটির অন্তিম দশা অর্থাৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ সময়ে তারকার মধ্যস্থিত অণুগুলো ভেঙে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন আলাদা হয়ে যায়। ইলেকট্রনের ভেতরে পরস্পরের যে বিকর্ষণ হয় তার ফলে তারকাটির সংকোচন কিছুটা কম হয়। তারকাটির এ অবস্থাকে হোয়াইট ডোয়ার্ফ বলা হয়। এভাবে তারকাটি স্বাভাবিক আকারের থেকে একশত ভাগ ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। কিন্তু হোয়াইট ডোয়ার্কের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তার স্বাভাবিক অবস্থার শক্তির তুলনায় দশ হাজার গুণ বেড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণের শক্তি এত পরিমাণ বেড়ে যায় যে, ইলেকট্রনের বিকর্ষণ সেখানে কার্যকর হয় না। এভাবে তারকাটি আরও সংকুচিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন ও প্রোটন একত্রিত হয়ে নিউট্রনে রূপান্তরিত হয়। এ পরিণতির তারকাটির রূপ হলো নিউট্রন স্টার। মহাজাগতিক নানা ঘটনার অজানা ব্ল্যাকহোলের রহস্য আমাদের কাছে চমকপ্রদ ব্যাপা। |
তৃতীয় সেশনঃ
■ এই সেশনের শুরুতে নিজ নিজ দলের সাথে বসে যাও। এবার পৃথিবী ও মহাবিশ্ব অধ্যায়টি যেহেতু বাড়ি থেকে ইতোমধ্যে পড়ে এসেছ, তাই এখন নিজেরা আলোচনা করো। যদি পড়া না হয়ে থাকে তাহলে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে পড়েও নিতে পারো।
■ কোনো জায়গা বুঝতে কষ্ট হলে শিক্ষকের সহায়তা নাও। কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর শিক্ষকের কাছে না-ও থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো নোট করে রাখো, যাতে পরে শিক্ষকসহ সবাই মিলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে পারো।
এবার প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখো-
■ মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে কোন তথাটি তোমার কাছে সবচেয়ে চমকপ্রদ মনে হয়েছে?
নমুনা উত্তর : গ্যালাক্সির একশ বিলিয়ন নক্ষত্রের মধ্যে এক পাশে পড়ে থাকা একটি খুবই সাদামাটা নক্ষত্র হলো সূর্য। সূর্য যে একটি সাদামাটা নক্ষত্র সেটা আমার কাছে সবচেয়ে চমকপ্রদ মনে হয়েছে।
■ এই অধ্যায়ে নতুন কোন কোন শব্দ জানলে যেগুলোর অর্থ আগে জানতে না?
নমুনা উত্তর : এই অধ্যায়ে নতুন যে সকল শব্দ সম্পর্কে জানতে পারলাম সেগুলো হলো -
১. নক্ষত্র;
২. গ্যালাক্সি
৩. ব্ল্যাকহোল,
৪. বিগ ব্যাং
৫. আলোক বর্ষ
৬. টেলিস্কোপ
■ মহাবিশ্বের ধারণা নিয়ে মানুষের ধ্যান-ধারণা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে কীসের ভিত্তিতে?
নমুনা উত্তর : মহাবিশ্ব নিয়ে প্রাচীনকালে মানুষের ধ্যান-ধারণা তেমন ছিল না। তারা মনে করতেন, শুধু পৃথিবীই সমস্ত মহাবিশ্ব। তারা আরো মনে করত, পৃথিবী সমতল এবং আকাশ পৃথিবীকে বাটির ন্যায় ঘিরে রেখেছে। চাঁদ, সূর্য, বিভিন্ন নক্ষত্র আকাশে অবস্থান করে নড়াচড়া করে। কিন্তু ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ভিত্তিতে মহাবিশ্বের ধারণা সম্পর্কিত মানুষের ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, পৃথিবী সমতল নয় গোলাকার এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।
■তুমি নিজে কি কখনও রাতের আকাশ ভালোভাবে লক্ষ করেছ। তোমার নিজের কোনো পর্যবেক্ষণের সাথে সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর ঘূর্ণন, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্রমণ্ডলী ও গ্যালাক্সি- ইত্যাদির কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও?
নমুনা উত্তর : আমি মেঘমুক্ত রাতের আকাশে ভালোভাবে লক্ষ করলে অসংখ্য নক্ষত্রকে কুয়াশার সাদা চাদরের ন্যায় বিস্তৃত থাকতে দেখি। এসকল নক্ষত্র হলো গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ। গ্যালাক্সির মধ্যে একশ বিলিয়ন নক্ষত্র বিদ্যমান রয়েছে। এই নক্ষত্রগুলোর মধ্যে সূর্য একটি সাদামাটা নক্ষত্র। পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ আবার সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকে। আমি রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারি যে, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর ঘূর্ণন, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্রমণ্ডলী ও গ্যালাক্সি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
■ দলের সাথে আলোচনার মধ্য দিয়েই তোমাদের দল থেকে গল্পের প্লট চিন্তা করে ফেলো। প্রতিটি দল থেকে একটা গল্পই বইয়ে স্থান পাবে, কাজেই সবাই মিলেই পল্পটা কী ধরনের হতে পারে তা ঠিক করে নাও। মূল আইডিয়া চিন্তা করার পর নিজেরা সতর্কভাবে যাচাই বাছাই করে দেখো, বৈজ্ঞানিক তথ্যের কোনো বিকৃতি ঘটল। একাধিক আইডিয়া থেকে থাকলে সবাই মিলে আলাপ আলোচনা করে একটা চূড়ান্ত আইডিয়া ঠিক করে নাও।
■ আইডিয়া চূড়ান্ত হলে অন্য দলের সমেনে তা উপস্থাপন করো। অন্যান্য দলের সবাই যে মতামত দবে তা নোট করে নাও, এতে তোমার গল্পগুলো আরো সমৃদ্ধ হবে। আবার অন্যান্য দল যখন তাদের গল্পের আইডিয়া উপস্থাপন করবে তখন তোমাদের দল থেকে সব সদস্য মিলে সেটিকে যাচাই-বাছাই করবে। এই যাচাই বাছাই করার সময় মূলত বিবেচনায় রাখতে হবে দুইটি বিষয়- গল্প মৌলিক কি না এবং এখানে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সঠিক ও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না।
■ তোমাদের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলে সবার মধ্যে পন না করে দুইটি করে দল মিলে একত্রে বসে সেখানে এক দল অন্য দলের আইডিয়া যাচাই বাছাই করে দেখো।
■ অন্য যেই দলের গল্পের আইডিয়া খুঁটিয়ে দেখার সুযো হয়েছে তার ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে ফেলো-
গল্পটার প্রেক্ষাপট এবং মূল বিষয়বস্তু কী
নমুনা উত্তর : প্রাচীনকালের মানুষ চারপাশের পরিবেশকে মহাবিশ্ব হিসেবে বিবেচনা করত। ধীরে ধীরে তাদের ধারণার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তারা ধার । করত পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র ঘুরতে থাকে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এই ধারণা পরিবর্তিত হয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী, নক্ষত্র, অন্যান্য গ্রহ ঘূর্ণায়মান। পরবর্তীতে বিজ্ঞানের আরও অগ্রগতির ফলে জানা যায় যে, সূর্য অতি সাধারণ একটি নক্ষত্র। মহাবিশ্বে সূর্যের ন্যায় আরও অসংখ্য নক্ষত্র বিদ্যমান রয়েছে। অসংখ্য নক্ষত্র মহাকর্ষ বলের প্রভাবে একসাথে আটকে থাকে। তাকে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ বলে। মহাবিশ্বের যে অংশটুকু দৃশ্যমান সেই অংশে প্রায় এক ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি বিদ্যমান থাকে। হাবল নামক একজন বিজ্ঞানী পর্যবেক্ষণ করে, একসময় গ্যালাক্সি একই স্থানে ছিল, কিন্তু সকল গ্যালাক্সি পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী হাবলের মতবাদ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, মহাবিশ্ব একটি প্রসারণ দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে। এই প্রসারণ দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টিকে বিগ-ব্যাং বলা হয়। অর্থাৎ বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে।
কল্পবিজ্ঞানের এই গল্পে কী কী বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহৃত হয়েছে অথবা কোন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রসঙ্গ এসেছে।
নমুনা উত্তর :
১. বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, সূর্য একটি অতি সাধারণ নক্ষত্র এবং মহাবিশ্বে সূর্যের ন্যায় অসংখ্য নক্ষত্র বিদ্যমান রয়েছে।
২. অসংখ্য নক্ষত্র কুয়াশার সাদা চাদরের ন্যায় গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে বিস্তৃত থাকে।
৩. আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিশ্ব একটি প্রসারণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এই প্রসারণটি বিগ ব্যাং নামে পরিচিত। বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে।
■ এই গল্পে বৈজ্ঞানিক কোন তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তোমার মনে হয়েছে। হলে সেটা কী এবং কেন তোমার এমনটা মনে হলো?
নমুনা উত্তর : পৃথিবীর বাইরের গ্রহ, নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই বৈজ্ঞানিক তথ্যটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারণ, সূর্য হলো একটি নক্ষত্র। পৃথিবী, চাঁদ, অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে।
■ নিজেদের দলে আলোচনা করে অন্য দলের মতামত অনুযায়ী গল্পে কোনো পরিবর্তন করতে চাও কি না ভেবে দেখো, এরপর আইডিয়া চূড়ান্ত করে নাও। এরপর নিজেরা কথা বলে একটা পরিকল্পনা করে নাও পূর্ব নির্ধারিত ডেডলাইনের মধ্যে কীভাবে লেখার ও আঁকার কাজ শেষ করবে।
চতুর্থ সেশনঃ
■ গল্প লেখার কাজটা তোমরা শ্রেণিকক্ষে বসে বা বাড়িতে বসে করতে পারো। সবাই মিলে আলোচনা করে গল্পটা সাজিয়ে নাও, এরপর দলের একজন দায়িত্ব নিয়ে সেটাকে গুছিয়ে লেখো।
■ তোমার নিজের নোট হিসেবে গল্পটার সারসংক্ষেপ নিচে ঢুকে রাখো-
নমুনা উত্তর : প্রাচীনকালে মানুষ মনে করত, পৃথিবীই হলো মহাবিশ্ব এবং আকাশ পৃথিবীকে বাটির ন্যায় ঢেকে রেখেছে। চাঁদ, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র আকাশের সাথে লাগানো ছিল। পৃথিবী ছিল সমতল কিন্তু ধীরে ধীরে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ধারণা করল যে, পৃথিবী গোলাকার এবং পৃথিবীরে কন্দ্র করে গ্রহ, নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্য ঘূর্ণায়মান। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে ধারণা হয় যে, সূর্য হলো কেন্দ্রবিন্দু এবং সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ ঘুরে। সূর্যকে একটি সাধারণ নক্ষত্র হিসেবে ধরা হয় এবং মহাবিশে সূর্যের ন্যায় অসংখ্য নক্ষত্র বিদ্য মান রয়েছে। রাতের আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র কুয়াশার চাদরের ন্যায় বিস্তৃত থাকে যাদের। পথ বা গ্যালাক্সি বলা হয়। অর্থাৎ অসংখ্য নক্ষ মহাকর্ষ বলে একসাথে আটকে থাকাকে গ্যালাক্সি বলে। একশত বিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে গ্যালাক্সি গঠিত। মহাবিশ্বের। টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা যায় সেখানে প্রায় এক ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি বিদ্যমান রয়েছে। হাবল নামক বিজ্ঞানী লক্ষ করেন যে, গ্যালাক্সিসমূহ একে অপরের কাছ থেকে পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি ধারণা করলেন যে, সবগুলো গ্যালাক্সি একই স্থানে অবস্থান করত। হারে এই যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিশ্ব একটি প্রসারণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয় বিগ ব্যাং। ধারণা করা হয় যে, বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। মহাবিশ্বের যে অংশটুকু আমাদের দৃশ্যমান সেটি সৃষ্টির শুরুর দিকে একটি কমলালেবুর ন্যায় ছিল। মহাবিশ্ব যত বড় হতে শুরু করল তার তাপমাত্রা ততই কমতে শুরু করল। বিগ ব্যাং প্রসারণের মাধ্যমে কমলালেবুর ন্যায় ছোট মহাবিশ্ব বর্তমানে একশত বিলিয়ন আলোকবর্ষের সমান।
■ দলের মধ্যে যার আঁকার হাত ভালো, তাকেই নিশ্চয়ই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গল্পের সাথে চিত্রাঙ্কন বা ইলাস্ট্রেশনের? গল্পের সাথে কী ধরনের ছবি আঁকা যেতে পারে তার আইডিয়া দিয়ে বাকিরা কিন্তু এই আঁকিয়েকে সাহায্য করতে পারো।
■ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে লেখা ও আঁকা শেষ করে সম্পাদনা কমিটির কাছে জমা দাও ।
■ সম্পাদনা কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকে নিজেদের দলেরটা বাদে অন্য কোনো দলের লেখা সম্পাদনা করে চূড়ান্ত করবে। বানানের ভুলত্রুটি ঠিক করার দক্ষতা বেশি এখন এক বা একাধিক সদস্য প্রুফ রিডিং এর কাজটি করতে পারো।
■ সবগুলো দলের জমা দেওয়া গল্পগুলো সম্পাদনা প্রুফ রিডিং শেষ হলে তোমাদের মধ্যেই কেউ একজন দায়িত্ব নিয়ে সব লেখা একত্র করে প্রকাশনা কমিটির কাছে দাও।
■ প্রকাশনা কমিটি বইটির চূড়ান্ত প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করবে। সম্ভব হলে গল্পগুলো কম্পোজ করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কিংবা সেটা করা কঠিন হলে হাতে লিখে বইটি চূড়ান্ত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তোমাদের ক্লাসে হাতের লেখা ঝরঝরে এমন এক বা একাধিক সদস্যকে দিয়ে গল্পগুলো পুনরায় বই আকারে লিখিয়ে নেওয়া যায়। প্রকাশনা কমিটি সবগুলো দল থেকে পাওয়া ছবি ও অলঙ্করণ কীভাবে বইয়ে যোগ হবে তাও ঠিক করে নেবে। এছাড়া বইয়ের শুরুতে ভেতরের প্রচ্ছদ, প্রিন্টার্স লাইন, সুচিপত্র ইত্যাদি যেসব পৃষ্ঠায় থাকে সেই পৃষ্ঠাগুলোও প্রস্তুত করে নেবে। প্রয়োজন হলে আগের দেখা গল্পের বইগুলোয় আরেকবার চোখ বুলিয়ে নাও।
■ বইটির নাম কী হবে কিছু ভেবেছ? ক্লাসের সবাই আলাপ করে নাম কী হতে পারে তা প্রস্তাব করো, সবাই মিলে ভোটাভুটি করে একটা নাম চূড়ান্ত করে নাও ।
■ প্রচ্ছদ আঁকার জন্য তোমাদের শ্রেণি থেকে এক বা একাধিক শিক্ষার্থী দায়িত্ব নিতে পারো।
■ এরপর বই বাঁধাইয়ের পালা। তোমাদের ক্লাসের কেউ কি বই বাঁধাই করতে জানে? সেক্ষেত্রে তার বা তাদের কাছ থেকে বাকি শিক্ষার্থীরা বই বাঁধাইয়ের কৌশল শিখে নিতে পারো। সেটা যদি না পারা যায় তাহলে তোমাদের ক্লাসের কারো অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষক বা অন্য কর্মচারী, অথবা পেশাদারিভাবে বই বাঁধাই করে এমন মানুষের সাহায্য নিতে হবে। কাজটা শিখে যাবার পর প্রকাশনা কমিটির সদস্যরা মিলে বইটি সত্যিকারের বইয়ের মতো করে বাঁধাই করে ফেলো।
■বাঁধাই হয়ে গেল? এখন তোমাদের নিজেদের গল্প, আঁকা নিয়ে সত্যিকারের একটা বই প্রকাশিত হয়েছে, যার প্রকাশক তোমরা নিজেরাই। এটা কী অসাধারণ একটা বিষয় ভেবে দেখেছ?
■ এই সেশনে সবাই আলোচনা করে একটা তারিখ ঠিক করে নাও যে তারিখে তোমরা বইটার প্রকাশনা উৎসব করতে চাও, যেখানে তোমাদের নিজেদের প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এই প্রকাশনা উৎসব কীভাবে, কখন আয়োজন করবে এটাও পরিকল্পনা করে নাও। তবে খেয়াল রেখো, এই উৎসব যাতে কোনোভাবেই খরচসাপেক্ষ না হয়।
এই সেশনে সবাই আলোচনা করে একটা তারিখ ঠিক করে নাও যে তারিখে তোমরা বইটার প্রকাশনা উৎসব করতে চাও, যেখানে তোমাদের নিজেদের প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এই প্রকাশনা উৎসব কীভাবে, কখন আয়োজন করবে এটাও পরিকল্পনা করে নাও। তবে খেয়াল রেখো, এই উৎসব যাতে কোনোভাবেই খরচসাপেক্ষ না হয়।
■ চাইলে রঙিন কাগঞ্জ, রং ইত্যাদি ব্যবহার করে আমন্ত্রণপত্রও বানিয়ে ফেলতে পারো। যেটা তোমাদের অনুষ্ঠানের অতিথিদের দিতে পারবে।
পঞ্চম সেশনঃ
■ আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে প্রকাশনা উৎসবের মাধ্যমে তোমাদের বইয়ের মোড়ক উম্মোচন বার পর সেখান থেকে কিছু নির্বাচিত অংশ পাঠ বা উপস্থাপন করতে পারো।
■ দলের নিজেরা অন্য দলের লেখা পড়ে ফিডব্যাক দিতে পারো।
■ সব শেষে বইটি বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার অথবা তোমাদের শ্রেণিকক্ষে যদি বইয়ের শেলফ থাকে সেখানে রাখবে, যাতে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও পড়তে পারে। তোমাদের শিক্ষক এই বইটি স্ক্যান করে আকারে সংরক্ষণ করতে পারেন, যাতে আরো বেশি মানুষকে তা পড়তে দেওয়া যায়।
■ পুরো বইয়ের সবগুলো গল্প ভালোভাবে পড়েছ? কোন গল্পটা মার সবচেয়ে ভালো লেগেছে (অবশ্যই তোমাদের নিজের দলের গল্পটা বাদে)? তোমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পটার সারসংক্ষেপ টুকে রাখো।
এই গল্পের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো-
■ গল্পটার সারসংক্ষেপ-
নমুনা উত্তরঃ নক্ষত্র জীবিত প্রাণী। হওয়া সত্ত্বেও এর জন্ম ও মৃত্যু দুটিই ঘটে। নক্ষত্রের জীবন বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। বড় আকৃতির নক্ষত্র তার জ্বালানি শেষ করার সময় অনেক ধরনের মৌল তৈরি করে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং জীবন শেষ করে। এই বিস্ফোরণ হলো সুপারনোভা বিস্ফোরণ, যার আলোয় সমস্ত মহাবিশ্ব আলোকিত হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্রের বাইরের অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে যায় কিন্তু ভিতরের অংশটুকু মহাকর্ষ বলের প্রচণ্ড আকর্ষণে সংকুচিত হয়ে কোনো কোনো সময়ে ব্ল্যাকহোলে রূপান্তরিত হয়।
■ কল্পবিজ্ঞানের এই গল্পে কী কী বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহৃত হয়েছে অথবা কোন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রসঙ্গ এসেছে? নমুনা উত্তর :
১. সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে যে আলো নির্গত হয় সেই আলো পুরো মহাবিশ্ব আলোকিত করে।
২. মহাবিশ্বের বেশিরভাগ নক্ষত্রের জন্ম হয়, একটা দীর্ঘ জীবন আলো দেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করে।
৩. মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে থাকলে ঐ আলো আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় ।
■ এই গল্পের কোন বিষয়টা তোমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। কেন?
নমুনা উত্তর : নক্ষত্র তার জ্বালানি শেষ করার সময় তার ভেতরে অসংখ্য মৌল তৈরি করে। এসকল মৌল একসময় অবিশ্বাস্য একটি বিস্ফোরণ ঘটায়, যাকে সুপারনোভা বিস্ফোরণ বলে। এই বিস্ফোরণ থেকে যে আলো উৎপন্ন হয় তা সমস্ত মহাবিশ্বকে আলোকিত করে। গল্পের এই বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে, কারণ সুপারনোভা বিস্ফোরণ না ঘটলে নক্ষত্রের মৃত্যু হতো না এবং মহাবিশ্ব আলোকিত হতো না। সবসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকতো।
১। কোনো নির্দিষ্ট বই পড়ে ভালো লাগলে তা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে নাও। এবার এরকম একটি বই প্রকাশের জন্য পাঠকের কাছে তোমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে বই প্রকাশের কাজের ধাপগুলো ছকের খালিঘরগুলো পুরণ করে রাখতে পারো।
দল-১ |
দল- ২ |
দল- ৩ |
1. 2. 3. 4. |
1. 2. 3. 4. |
1. 2. 3. 4. |
নমুনা উত্তর : দল তিনটির বই প্রকাশের কাজের ধাপগুলো নিচের ছকের খালিঘরগুলোতে পূরণ করা হলোঃ
দল-১ |
দল- ২ |
দল- ৩ |
১. পাণ্ডলিপি তৈরি ২. কম্পোজ করা ৩. সম্পাদনা করা ৪. প্রুফ রিডিং করা |
১. পেজ সেটআপ ও ট্রেসিং/ পজিটিভ প্রিন্ট দেওয়া ২. প্রচ্ছদ ডিজাইন করা ৩. বই বাঁধাই করা ৪. কভার লেমিনেটিং করা |
১. পেস্টিং করা ২. আইএসবিএন নম্বর দেওয়া ৩. কপি রাইট আইনের অন্তর্ভুক্ত করা ৪. বই বাজারজাত করা |
২। ক্লাসের দশজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে দল গঠনের মাধ্যমে একটি পুস্তক প্রকাশক সমিতির সদস্য নির্বাচন করে নাও। এ পেশা জানার সবচেয়ে বেশি আগ্রহী সদস্যকে সভাপতি নির্বাচিত করে অন্য সব স কমিটির বিভিন্ন পদবীতে ভোটের মাধ্যমে মনোনীত করো।
নমুনা উত্তর : ক্লাসে দল গঠনের মাধ্যমে একটি পুস্তক প্রকাশক সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হলো -
সদস্যের |
পদবী |
১. হাফিজুর রহমান ২. শাখাওয়াত হোসেন ৩. রায়হান চৌধুরী ৪. নাঈমুর রহমান ৫. জহিরুল ইসলাম ৬. নিমাই রায় চৌধুরী ৭. ইমরান হোসেন ৮. আবদুল খালেক ৯. আবদুল কাইয়ুম ১০. নাসুম আহমেদ |
সভাপতি সহসভাপতি সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক সম্পাদক অর্থ সম্পাদক দপ্তর সম্পাদক প্রচার সম্পাদক কোষাধ্যক্ষ গবেষণা সম্পাদক সদস্য |
৩। শ্রেণিকক্ষে দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে একটি বই প্রকাশের যাবতীয় কাজের ধাপগুলো নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করো। ফাঁকা ঘরে তোমার পরিকল্পনা টুকে রাখো।
কাজের ধাপ |
কাজের ধাপ |
কাজের ধাপ |
কাজের ধাপ |
|
|
|
|
নমুনা উত্তর : বই প্রকাশের নির্দিষ্ট সময় : ৬/২/২০.........
কাজের ধাপ |
কাজের ধাপ |
কাজের ধাপ |
কাজের ধাপ |
১. পাণ্ডুলিপি তৈরি ২. কম্পোজ করা ৩. সম্পাদনা করা ৪. প্রুফ রিডিং করা ৫. পেজ সেটআপ করা ৬. ট্রেসিং দেওয়া ও পেস্টিং নিরীক্ষণ করা ৭. বই বাজারজাত করা |
08/01/20.......... 20/01/20.......... 26/03/20........ ৩১/০১/২০......... 02/02/20........ 08/02/20........ 06/02/20........ |
20/01/20......... ২৫/০১/২০........ 03/03/20........ 02/02/20........ 00/02/20........ 08/02/20........ |
নির্দিষ্ট
সময়ে বই। বাজারজাত করা স হয়েছে। |
৫। গল্প লেখার শখের নেশায় আগ্রহী করে তুলতে শ্রেণিকক্ষে সবাই একে অন্যকে সহায়তা করতে পারো। তাদের মধ্যে নির্বাচিত কোনো ছাত্রের মজার একটি গল্প নিচে টুকে রাখো।
নমুনা উত্তর : একদা রাজা বনে কাঠ কাটার জন্য কয়েকজন কাঠুরি নিয়োগ দিতে চাইলেন। সবার মধ্যে একজন কাঠুরি দ্রুততম সময়ে অন্যদের তুলনায় বেশি কাঠ কেটে দেখালো। তাতে রাজা অনেক খুশি হয়ে তাকে প্রধান কাঠুরি নিয়োগ দিলেন এবং পুরস্কৃত করলেন। সে এতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে কাজ করতে লাগলো। তার প্রথম মাসে ১৮টি গাছ কাটা দেখে রাজা খুবই খুশি হলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মাসে সে ১৫টি এবং তৃতীয় মাসে ১২টি গাছ কাটলো। রাজা ৩ মাসের এ ফলাফল দেখে কিছুটা অবাক হলেন। কাঠুরির সক্ষমতা, পরিশ্রম এবং সততা নিয়ে রাজার কোনো সন্দেহ ছিল না। তাই কাঠুরির কাছে তিনি এর কারণ জানতে চাইলেন। তখন কাঠুরি বললো, “মহামান্য রাজা, আমি আমার সাধ্যের কোনো ত্রুটি করছি না, তবুও কাজ কম হচ্ছে। হয়তো আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।” রাজা বললেন, আচ্ছা তোমার কুড়ালটি নিয়ে এসো। রাজা কুড়ালটি দেখলেন এবং কাঠুরিকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'এই মাসে শেষ কবে কুড়ালটিতে ধার দিয়েছিলে বলো তো'। কাঠুরি যে জবাব দিল রাজা তাতে অবাক হয়ে গেল। কাঠুরি এসময় বললো, 'হুজুর, প্রতিদিন বেশি থেকে বেশি কাঠ কাটার জন্য গত তিন মাসে কুড়াল ধার দেওয়ার পিছনে সময় দিতে পারিনি।' এখন রাজা ও কাঠুরি দুইজন গাছ কাটার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলো।