সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সমাধান থিম:২- 7th Class Subject History and Social Science Annual Summative Assessment Solution Theme: 2

Mohammad Rashed
0

মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা

সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সমাধান  থিম:২- 7th Class Subject History and Social Science Annual Summative Assessment Solution Theme: 2

কাজ-১: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান ।

থিম-২: মুক্তযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা

অনুসন্ধানের প্রশ্ন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?

প্রশ্নে যে বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:

১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কারা অংশগ্রহণ করেছিনে?
২. মুক্তিযুদ্ধে কোন কোন শ্রেণির লোক অংশ নিয়েছিলেন?
৩. মুক্তিযুদ্ধে কি নারীদের কোনো ভূমিকা বা অবস্থা ছিল ?
৪. মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কোন পক্ষ ছিল কী?

তথ্যের উৎস: পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইন্টারনেট।

তথ্য বিশ্লেষণ: উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন পক্ষ সম্পর্কে জেনেছি। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:


তথ্য উপস্থাপন:

মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধ; মানে মুক্তির জন্য যুদ্ধ । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হয়েছিল, তাই ধর্ম-বর্ণ-ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সকলের অংশগ্রহণে এ যুদ্ধ সার্বজনীনতা লাভ করে। তবে দেশের সবাই যে যুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল, তা নয় । বরং কতিপয় দেশদ্রোহী গোষ্ঠী আপামর জনগণের স্বার্থকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও হানাদার বাহিনীর হয়েও কাজ করেছিল। নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো:


১। মুক্তিযোদ্ধা: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ভাষণের উদ্বুধ হয়ে দেশের মুক্তিকামী জনতা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। যার কাছে যা ছিল, তাই নিয়ে শত্রু মোকাবিলায় যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়েন। এরাই মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন, জীবন বিসর্জন দেন এবং অবশেষে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ।


২। শিল্পীঃ বাংলাদেশের তৎকালীন শিল্পী সমাজ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল । তাঁরা হয়তো সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে পারেননি, তবে যুদ্ধের মাঠের বাইরে থেকে যোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতারে বিভিন্ন শিল্পীরা দেশত্ববোধক গান পরিবেশন করেন। যা শুনে যুদ্ধের ময়দানে মুক্তিযোদ্ধারা অবিরাম উৎসাহ পেয়েছিলেন। শুধু মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করেই তৎকালীন সময়ে অসংখ্য দেশত্ববোধক গান রচনা করা হয় । যা মুক্তিযোদ্ধাদের মনে দেশপ্রেমের সঞ্চার করেছিল। তাই বলা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে এসব শিল্পী-সমাজের ভূমিকা অপরীসিম।


৩। স্থানীয় নারী-সমাজ: মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় যাঁরা এগিয়ে আসেন, তাঁরা হচ্ছেন বাংলার নারী-সমাজ। যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন তাঁরা। মা- বোনদের সেবা পেয়ে পুনরায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতেন যোদ্ধারা। শুধু অসুস্থ যোদ্ধাদের সেবাই না, পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন গোপন খবরও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করতে তাঁরা। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ এবং সম্ভ্রম দিতে হয়েছে অনেক নারীকে। ইতিহাসে যাঁদের আমরা বীরঙ্গনা নামে চিনি।


8। রাজাকার: মুক্তিযুদ্ধে সবাই যে দেশের হয়ে লড়াই করেছিল, তা কিন্তু না। এদেশেরই আলো-বাতাসের বড় হওয়া কতিপয় মানুষ ও সংগঠন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং হানাদার বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিল । এরাই মূলত রাজাকার । মুক্তিযুদ্ধে এদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ নেতিবাচক । এরা মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পৌঁছে দিত, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিত এবং নারীদেরকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিত। শুধু তাই না, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট এসব রাজাকারা এদেশের বহু মানুষের ঘরবাড়ি লুণ্ঠন করে জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে দেয় এবং জায়গা-জমি দখল করে নেয় ।


সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল, ঠিক তেমনি নেতিবাচক ভূমিকাও রেখেছিল অনেকে। যেসব বীর যোদ্ধাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি, বাঙালি জাতি তাঁদের আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করা আল-বদর, আল-শামস তথা রাজাকারদের জাতি ঘৃণার সাথে স্মরণ করবে।


ফলাফল বা সিদ্ধান্ত: প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ দল-মত নির্বিশেষে দেশ-মাতৃকার টানে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আবার একটি স্বার্থান্বেসী মহল নিজেদের স্বার্থসাধনে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করেছিল।

 

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!