সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সমাধান থিম:১- Annual Summative Assessment Solution Themes of Class VII Subjects History and Social Science:1

Mohammad Rashed
1

মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন সমাধান

সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সমাধান  থিম:১- Annual Summative Assessment Solution Themes of Class VII Subjects History and Social Science:1

কাজ-১: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান ।

থিম-১: মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন।

অনুসন্ধানের প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন কেমন ছিল? প্রশ্নে যে বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:

১. মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তানে কোন কোন রাজনৈতিক দল সক্রিয় ছিল?
২. পূর্ব-পাকিস্তানভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম কী ছিল?
৩. রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁদের ভূমিকা কী ছিল?
৪. পূর্ব-পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দল কী নির্বাচিত হয়েছিল?
৫. নির্বাচিত হলে তাঁরা কি দেশ শাসনের ক্ষমতা পেয়েছিল?

তথ্যের উৎস: পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইন্টারনেট।

তথ্য বিশ্লেষণ: উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দিয়েছে, এমন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপনঃ

মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আর্থ-সামজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব যেমন ছিল, ঠিক তেমন রাজনৈতিক প্রভাবও ছিল অনেক। তৎকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনেক প্রেক্ষাপট জাতিকে একটি যুদ্ধের দিকে ধাবিত করে। যেভাবে রাজনৈক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি নতুন রাষ্ট্রগঠনের দিকে ধাবিত হয়েছিল, তা নিচে তুলে ধরা হলো:

• ভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগের নিষ্ক্রীয় ভূমিকা দেখে পূর্ব-বাংলার জনগণ দলটির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে বৃহৎসংখ্যক জনগণের সমর্থনে মুসলিম লীগের মেরুদণ্ডবিহীন কার্যকলাপ এবং পশ্চিম পাকিস্তানি ও সামন্ত প্রভুদের কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে এদেশের মানুষ আওয়ামীলীগ গঠন করে যা স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকনির্দেশনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । মূলত আওয়ামীগ গঠন ছিল মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতি প্রেক্ষাপটের প্রথম সূত্রপাত।

• পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের বৈষম্যপূর্ণ আচরণ অব্যহত রাখলে অধিকার সচেতন এদেশের মানুষ ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্মিলিত যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। একুশ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে। বাঙালিদের এ বিজয়কে পাকিস্তানি শাসক চক্র সহজে মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকে। বাঙালি-অবাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে এদেশের সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ১৯৫৫ সালে গণপরিষদ ভেঙে দিয়ে অনেক নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে।

• ১৯৬০ সালের প্রথম দিকে শরিফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যা ১৯৬২ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয় । কিন্তু বৈষম্যমূলক বলে ওই শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

• পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শোষণ বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। কিন্তু সেটি তখন গৃহীত হয়নি। বরং পাকিস্তানকে ভেঙে দুইভাগ করতে চাওয়ার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত মামলাটি দায়ের করা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে এই মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

• ১৯৬৯ সালের শুরুতে পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

• ৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭০ তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । অথচ বিশাল জয় পাওয়া সত্যেও পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা আওয়ামীলীগের হাতে দেওয়া হয় না। ফলে চূড়ান্ত যুদ্ধের দিকে চলে যায় দেশ।

• ৭ই মার্চ, ১৯৭১। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় ১৮ মিনিট ব্যাপী ভাষণ দেন। ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও, সেখানেই শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।'

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত-নিপীরিত জনগণ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত: প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে নানাভাবে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে শাসন ক্ষমতার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। পূর্ব-বাংলার আর্থ-সামজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বঞ্চিত জনগণ রাজনৈতিকভাবেও ছিল অবহেলিত। আর এই অন্যায়-অত্যাচারের ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। 

Post a Comment

1Comments

Post a Comment

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!