
৮ম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তক বই ২০২৪ পিডিএফ
পাঠ শিখনকালীন মূল্যায়ন - ৬০%, সামষ্টিক মূল্যায়ন - ৪০%
পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে জীবন ও জীবিকা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে পরিবর্তনের গতিও হয়েছে অনেক দ্রুত। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়ন ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলেছে অভাবনীয় গতিতে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের কর্মসংস্থান এবং জীবনযাপন প্রণালিতে যে পরিবর্তন নিয়ে আসছে তার মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে। অদূর ভবিষ্যতে অনেক নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে যা এখনও আমরা জানি না। অনাগত সেই ভবিষ্যতের সাথে আমরা যেন নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারি তার জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পৃথিবী জুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটলেও জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, অভিবাসন এবং জাতিগত সহিংসতার মতো সমস্যা আজ অনেক বেশি প্রকট। দেখা দিচ্ছে কোভিড ১৯ এর মতো মহামারি যা সারা বিশ্বের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিকে থমকে দিয়েছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় সংযোজিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা।
এসব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার টেকসই ও কার্যকর সমাধান এবং আমাদের জনমিতিক সুফলকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজন-সক্ষম, মানবিক, বৈশ্বিক এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষা হচ্ছে এই লক্ষ্য অর্জনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এজন্য শিক্ষার আধুনিকায়ন ছাড়া উপায় নেই। আর এই আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে একটি কার্যকর যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একটি নিয়মিত, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলো শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন। সর্বশেষ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয় ২০১২ সালে। ইতোমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়নের। এই উদ্দেশ্যে শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপণের জন্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালব্যাপী এনসিটিবির আওতায় বিভিন্ন গবেষণা ও কারিগরি অনুশীলন পরিচালিত হয়। এসব গবেষণা ও কারিগরি অনুশীলনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো যোগ্য প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিচ্ছিন্ন যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করা হয়েছে।
যোগ্যতাভিত্তিক এ শিক্ষাক্রমের আলোকে সকল ধারার (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হলো। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এমনভাবে রচনা করা হয়েছে যেন তা অনেক বেশি সহজবোধ্য এবং আনন্দময় হয়। এর মাধ্যমে চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা বিভিন্ন প্রপঞ্চ ও ঘটনার সাথে পাঠ্যপুস্তকের একটি মেলবন্ধন তৈরি হবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে শিখন হবে অনেক গভীর এবং জীবনব্যাপী।
বাংলা বইয়ের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের ভাষা দক্ষতা বাড়ানো এবং বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো। এই উদ্দেশ্য থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ধারাবাহিকতায় অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইটি প্রণীত।
প্রমিত ভাষা শেখার কাজে যতটুকু ব্যাকরণ প্রয়োজন, তার বাইরে শিক্ষার্থীকে যাতে আলাদাভাবে ব্যাকরণ মুখস্থ করতে না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থী যাতে আনন্দের সাথে ভাষা শেখার কাজ সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য এই পাঠ্যপুস্তকের যাবতীয় কাজ ও কৌশল পরিকল্পিত। অভিন্ন উদ্দেশ্যে এখানে সংকলিত হয়েছে জীবনঘনিষ্ঠ নানা ধরনের নমুনা ও উপকরণ। ভাষা ব্যবহারেও কথোপকথনের ভঙ্গি রক্ষা করা হলো।
পাঠ নির্বাচনের সময়ে খেয়াল রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীর সঙ্গে যাতে বাংলা সাহিত্যের প্রধান প্রধান লেখকের পরিচয় ঘটে। আবার, এই পরিচয় যাতে তার প্রমিত ভাষা শেখার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটিও মনে রাখা হয়েছে। তাই নির্বাচিত সাহিত্যপাঠের কিছু কিছু ক্ষেত্রে শব্দরূপের পরিবর্তন করতে হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীর বয়স ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে কোনো কোনো পাঠ সংক্ষিপ্তও করতে হয়েছে।
পূর্ববর্তী শ্রেণির সাতটি দক্ষতাকে আরো উন্নীত করে এই শ্রেণিতে সেগুলো নিম্নরূপে সাজানো হলো:
২. প্রমিত ভাষায় কথা বলতে পারা এবং লিখতে পারা;
৩. বিভিন্ন ধরনের লেখা পড়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারা;
৪. শব্দ ও বাক্যের গঠন বিবেচনায় নিয়ে বাক্য রচনা করতে পারা এবং একইসঙ্গে অভিধান দেখে শব্দের বানান ঠিক করতে পারা ও অর্থ বুঝতে পারা;
৫. বিভিন্ন ধরনের বিবরণমূলক ও বিশ্লেষণমূলক রচনা লিখতে পারা;
৬. কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ-নাটক-সাহিত্যের বিভিন্ন রূপের বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারা, নিজের জীবন ও সমাজের সঙ্গে সাহিত্যের বিষয় ও ভাবকে মেলাতে পারা এবং সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে নিজের কল্পনা ও অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারা; এবং
৭. যুক্তি দিয়ে আলোচনা করতে পারা এবং আলোচনার সময়ে অন্যের মত বিবেচনায় নিতে পারা।
আমরা আশা করি, শিক্ষার্থীরা একে অপরকে সহায়তার মাধ্যমে তাদের ভাষাদক্ষতা ও সাহিত্যজ্ঞান বাড়াতে সক্ষম হবে। আগের দুটি শ্রেণির মতো অষ্টম শ্রেণির বইটিও অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধিতার জন্য কোনো কাজ করতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হলে প্রাসঙ্গিক সহায়তার জন্য শিক্ষক শিক্ষক-সহায়িকার সাহায্য নিতে পারেন।