খেলার মাঠে বিজ্ঞান
খেলাধূলা করতে তোমাদের কেমন লাগে? বছরের শুরুতে নিশ্চয়ই তোমাদের স্কুলে অনেক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে? তার ফাঁকে যদি একটা খেলাধুলার ইভেন্টের আয়োজন করা যায় তাহলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না। আর এই খেলার ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞানের অনেকগুলো বিষয় শেখা হয়ে গেলে তো এক ঢিলে দুই পাখি!
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন:
- কেমন আছো তোমরা সবাই? বিজ্ঞান বিষয়ে বছরের প্রথম শিখন অভিজ্ঞতায় তোমাদের সবাইকে স্বাগতম!
- খুব সিরিয়াস পড়াশোনার আগে একটু খেলাধুলা নিয়ে বরং আলাপ করা যাক। খেলাধুলা করতে তোমাদের কেমন লাগে? তোমাদের মধ্যে নিশ্চয় এমন অনেকে আছো যারা বিভিন্ন খেলায় অনেক ভালো; কেউ হয়তো দাবা, কেউ হয়তো ক্যারাম বোর্ড, কেউ ফুটবল বা ক্রিকেট, কেউবা হয়তো দৌড়ে খুব ভালো।
- তোমাদের যেসব খেলা খেলতে ভালো লাগে সেটা দিয়ে স্কুলে একটা আয়োজন করলে কেমন হয়। বলতো? তবে সেজন্য এই আয়োজনের সমস্ত কাজটাই তোমাদেরকেই করতে হবে। আয়োজনের জন্য শুরুতেই ঠিক করে নাও কী কী ইভেন্ট তোমাদের এই খেলায় থাকবে। কিছু পরিচিত ইভেন্ট থাকতে পারে যেমন দৌড়, ভার নিক্ষেপ, ক্যারাম বোর্ড ইত্যাদি। এর বাইরেও তোমরা যদি কোনো ইভেন্ট রাখতে চাও সেটা নিজেরা কথা বলে ঠিক করে নাও।
- ক্লাসে সবাই ৫-৬ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাও। দলের কে কোন খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাও, সেটা ঠিক করে নাও।
- ক্লাসে মোট কতগুলো দল হলো হিসাব করো এবং তোমাদের মধ্যে এক বা একাধিক দল মিলে এক একটি ইভেন্ট আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে, সেই অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নাও।
- চূড়ান্ত খেলাধুলার ইভেন্টের জন্য একটা তারিখ ঠিক করে নাও। এই ব্যাপারে শিক্ষকের পরামর্শ নিতে পারো। কোন একটা ছুটির দিন এই আয়োজন করা যেতে পারে। কিংবা কোন একদিন স্কুলের পরের ফাঁকা সময় টা তো তোমরা এই আয়োজন করতে পারো।
- • চূড়ান্ত খেলার আগে সবগুলো ইভেন্ট নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তুতি প্রয়োজন। শুরুতেই সবচেয়ে পরিচিত আইটেম- দৌড়, তার প্রস্তুতি নেয়া যাক।
- দৌড় প্রতিযোগিতার দায়িত্বে যেসব দল থাকবে তারা প্র্যাকটিসের সময়টাতেও সকল শিক্ষার্থীকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং কাদের পারফরম্যান্স ভালো তা দেখে সেই অনুযায়ী চূড়ান্ত খেলায় কারা কারা অংশগ্রহণ করতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি করবে।
- শুরু করা যাক প্র্যাকটিস সেশন।
- দৌড়ের প্র্যাকটিসে তোমাদের দল থেকে কে অংশগ্রহণ করেছে তার নামটা এখানে লিখে রাখো।
- • প্র্যাকটিস তো হলো এবার একটু চিন্তা করে দেখো দৌড়ের সময় কোনো দৌড়বিদ কি হঠাৎ করে থেমে যেতে পারে? খেয়াল করে দেখো ঠিক যেখানে দৌড়ে ট্রাক শেষ হয়- ওই যে যেখানে সবাই লাল ফিতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকে; সেখানটা এসে কেউ কি হুট করে থেমে যেতে পারে? নাকি তাকে কারো কিছুটা দৌড়ে তারপরে থামতে হয়?
- শুধু দৌড়ের কথাই minibd.com বলছি কেন? গাড়িতে বাসে বা যে কোনো দ্রুতগামী যানবাহনে চলাচল করার সময় গাড়ি যদি হঠাৎ করে থেমে যায় তাহলে কি আমরা সাথে সাথে থামতে পারি নাকি সামনের দিকে ঝুঁকে যাই? এই ঝুঁকে যাওয়ার ফলে অনেক সময় বড়ো বড়ো দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। যে কারণে সবসময় যাত্রীদের গাড়ির সিট বেল্ট বেঁধে রাখতে বলা হয়।
- এখন ভেবে দেখো এই ঝুঁকে যাওয়ার কারণটাই বা কী? কেনই বা আমরা দৌড়ের সময় হঠাৎ করে থেমে যেতে পারি না?
উত্তর; হঠাৎ ব্রেক করে গাড়ি থামিয়ে দিলে গতি জড়তার কারণে শরীরের উপরের অংশ সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। চায়। ব্রেক করার কারণে শরীরের নিচের অংশ গাড়ির সঙ্গে থেমে গেছে কিন্তু আমাদের শরীরের উপরে অংশ তখনো গতিশীল রয়ে গেছে, এজন্য সেটি সামনে minibd.com হেলে পড়ে। আর এজন্যই গাড়িতে বাসে বা যে কোনো দ্রুতগামী যানবাহনে চলাচল করার সময় গাড়ি যদি হঠাৎ করে থেমে যায় তাহলে আমরা সাথে সাথে থামতে পারি না বরং সামনের দিকে ঝুঁকে যাই।- এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটা ছোট্ট পরীক্ষা করে দেখা যাক।
- একটি গ্লাসের ওপরে এক টুকরো শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ডের ওপর একটি মুদ্রা রাখো।
- এবার ঝট করে টান দিয়ে কাগজটি সরিয়ে নাও। কী ঘটছে? মুদ্রাটি কি গ্লাসের ভেতরে গিয়ে পড়েছে? কেন? আগের দুইটি উদাহরণ যেমন দৌড় ও গাড়ি ব্রেকের ঘটনার সাথে কি এই ঘটনার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছো?
- তোমার উত্তর নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো।
উত্তর:একটি গ্লাসের ওপরে এক টুকরো শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ডের ওপর একটি মুদ্রা রেখে যদি টান দিয়ে কাগজটি সরিয়ে নিই, তাহলে দেখা যায়, মুদ্রাটি কাগজের সঙ্গে চলে না এসে গ্লাসের ভেতরেই পড়েছে।
অর্থাৎ, কাগজটি সরে গেলেও মুদ্রাটি তার আগের অবস্থানেই থাকার চেষ্টা করেছে। এই যে, স্থির থাকা একটি বস্তু স্থির হয়েই থাকতে চায়, এই ঘটনাকে 'স্তিতি জড়তা' (Static Inertia) বলে।
আগের দুইটি উদাহরণ যেমন দৌড় ও গাড়ি ব্রেকের ঘটনার সাথে এই ঘটনার মিল খুঁজে পাচ্ছি। কোনো দৌড়বিদেরদৌড়ানোর সময় তার একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ থাকে। দৌড় থামাতে হলে তাকে থামার জন্য ব্রেক করতে হয়। ব্রেক করলে দৌড়বিদের গতিবেগ হ্রাস minibd.comপায় এবং তিনি দাঁড়িয়ে যান। আবার, গাড়ি চলাচলের সময় তার একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ থাকে। গাড়ি থামাতে হলে তাকে থামার জন্য ব্রেক করতে হয়। ব্রেক করলে গাড়ির গতিবেগ হ্রাস পায় এবং গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়।এই তিনটি উদাহরণ বা ঘটনার মধ্যে যে মিলটি লক্ষ্যনীও তা হচ্ছে, সকল ক্ষেত্রেই একটি গতিশীল বস্তুকে থামাতে হলে তার গতিবেগ হ্রাস করতে হয়। অন্যথায় তাকে থামানো সম্ভব না।
- এবার শিক্ষকসহ তোমার অন্য সহপাঠীদের সাথে আলাপ করে দেখ তারা কী লিখেছে।
- তোমাদের বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'বল, চাপ ও শক্তি' অধ্যায়ে নিউটনের প্রথম সূত্র এবং স্থিতিজড়তা ও গতিজড়তা সম্পর্কে পড়ে নাও।
- কোন বস্তুর তার নিজের অবস্থায় থাকতে চাওয়ার এই যে প্রবণতা অর্থাৎ জড়তার ব্যাখ্যা কি বুঝতে পেরেছ? জড়তার আরো কিছু উদাহরণ কি তোমরা তোমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে দিতে পারবে?
উত্তর: জড়তা দুই ধরনের হয়ে থাকে। স্থিতি জড়তা এবং গতি জড়তা।
স্থিতি জড়তা :
স্থির বস্তু যে ধর্মের দরুন স্থির থাকতে চায় তাকে স্থিতি জড়তা বলে।
উদাহরণ: অনেকগুলি বইকে একের পর এক স্থাপন করে রাখার পর মাঝের কোনো একটি বইকে দ্রুত সরিয়ে নিলেও অন্য বইগুলো সরে আসে না। যা স্থিতি জড়তার একটি minibd.com চমৎকার উদাহরণ।
গতি জড়তা :
গতিশীল বস্তু যে ধর্মের দরুন একই সরলরেখায় গতিশীল থাকতে চায় তাকে গতি জড়তা বলে।
উদাহরণ: কোনো সাইকেল চালক সাইকেল চালাতে চালাতে প্যাডেল বন্ধ করে দিলেও সাইকেল গতি জড়তার জন্য কিছু দূর পর্যন্ত গতিশীল থাকে।
- এবার নিজে চিন্তা করে নিচের প্রশ্ন দুইটির উত্তর লেখো।
- তোমরা কখনো কম্বল পিটিয়ে পরিষ্কার করতে দেখেছ? তোষক বা কম্বলকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এর ধুলা বের করা হয়, এই ঘটনার সাথে জড়তার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও?
উত্তর: আমি কম্বল পিটিয়ে পরিষ্কার করতে দেখেছি। তোষক বা কম্বলকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এর ধুলা বের করা হয়, এই ঘটনার সাথে জড়তার যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছি তা হল:
স্থির জড়তার জন্য ধূলিকণাগুলো স্থির থাকলেও লাঠি দিয়ে কম্বলকে আঘাত করলে কম্বলের সুতাগুলো হঠাৎ গতিশীল হওয়ার কারণে ধলিকণা কম্বল থেকে আলাদা হয়ে ঝরে পড়ে।
সুতরাং, কম্বল বা তোষককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে জড়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
- ক্রিকেট খেলা দেখতে তোমাদের কেমন লাগে? তোমাদের মধ্যে কারা কারা স্পিন বোলিং আর পেস বোলিং এর পার্থক্য জানো? যারা জানো না তারা তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারো। এবার একটু ভেবে উত্তর দাও, স্পিন বোলাররা মোটামুটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই বল করেন, কিন্তু পেস বোলাররা দূর থেকে ছুটে এসে বল করেন কেন?
উত্তর: ক্রিকেট খেলা দেখতে আমাদের বেশ ভালোই লাগে। আমাদের মধ্যে অনেকেই স্পিন বোলিং আর পেস বোলিং এর পার্থক্য জানি। স্পিন বোলাররা মোটামুটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই বল করেন, কিন্তু পেস বোলাররা দূর থেকে ছুটে এসে বল করেন। নিম্নে এর কারণ তুলে ধরা হলো:
স্পিন বোলাররা মোটামুটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই বল করার কারণ হচ্ছে বলটিকে ঘোরানোর জন্য তাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান এবং দৃষ্টিকোণের প্রয়োজন পড়ে। আর ঐ অবস্থান এবং দৃষ্টিকোণ থেকে বলটিকে ঘোরানো সহজ হয়।
পেস বোলাররা দূর থেকে ছুটে এসে বল করার কারণ হচ্ছে তারা বলটিকে দ্রুত গতিতে নিক্ষেপ করে যার জন্য তাদের প্রচুর শক্তি প্রয়োজন। আর দৌড়ে এসে বল নিক্ষেপ করলে বোলারের গতিশক্তি আরও বৃদ্ধি পায় এবং বলটাকে খুব দ্রুত ব্যাটসম্যান এর কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
নিয়মিত সমাধান পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো দিয়েে পাশে থাকুন facebook.
where can i find session 3 and 4?...is it not uploaded?
ReplyDelete