ভাষা ও যোগযোগ
ভাষা
ঘড়ির কাঁটা ৯.৩০ এ পৌঁছে গেছে। অর্ণব স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিল। পেছন থেকে সয়েহে মা বললেন,
- সাবধানে যেও বাবা!
- ঠিক আছে মা।
অর্ণব দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এলো। মা বিদায়সূচক হাত নাড়লেন। অর্ণবও তাই করল। মা মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে দিলেন।
বাড়ির মূল দরজা পেরিয়ে অর্ণব রাস্তায় পাশে দাঁড়াল। রিকশা নিতে হবে। একটি খালি রিকশা এগিয়ে আসছিল। সে হাত দ্বারা ইশারা করল। রিকশাচালক ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেল।
- কই যাবা বাবা?
- আদর্শ স্কুল। যাবে?
-হ যামু। আহেন।
লক্ষ কর, ঘড়ির কাঁটা ৯.৩০ এ পৌঁছে যাওয়ায় অর্ণব বুঝতে পেরেছে তাঁর স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে। মা তাকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন 'সাবধানে যেও বাবা'। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে নিয়ে অর্ণব বলেছে 'ঠিক আছে মা।' যাওয়ার সময় মা বিদায়সূচক হাত নেড়েছেন। জবাবে অর্ণবও তাই করেছে। রিকশায় প্রয়োজনে অর্ণব হাত তুলেছে। রিকশাচালক খেমে গিয়েছেন।
এখানে প্রতিটি দৃশ্যপটে এক-একজন কোনো একটি বিষয়ে কিছু বুঝিয়েছেন অন্যজন তা বুঝে নিয়েছেন। অর্থাৎ একজনের
ভাব অন্যজন অনায়াসে বোধগম্য হয়েছে। ভাব আদান-প্রদানের এই মাধ্যমটিকেই আমরা ভাষা বলি।
ঘড়ির কাঁটা শব্দের ব্যবহার বা ইশারা-ইঙ্গিতে কিছু না বললেও নির্দিষ্ট নির্দেশনার মাধ্যমে যা বুঝিয়েছে তা কিন্তু অর্থবোধক।
মা ও ছেলে প্রথমে কিছু শব্দের মধ্যে ভাব আদান-প্রদান করেছেন। তারপর হাতের ইশারায় একজন অন্যজনকে বিদায় জানিয়েছেন। অর্ণব হাত তুলে রিকশাচালককে থামার জন্য সংকেত প্রদান করেছে। এগুলোর সবই এক একটি অর্থ বহন করে।
অর্থ বহন করে বলেই এগুলো ভাষা এলোমেলোভাবে অর্থহীন শব্দের উচ্চারণ বা অঙ্গভঙ্গি যা নির্দিষ্ট কোনোকিছু নির্দেশ করতে, বোঝাতে সক্ষম নয় সেগুলো ভাষা হিসেবে স্বীকৃত নয়।
ভাষার সংজ্ঞা
মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে যখন কোনো কথা বলে, তখন তার মুখ দিয়ে কতকগুলো ধ্বনি উচ্চারিত হয়। ধ্বনি উচ্চারণের জন্য মানুষের রয়েছে বেশকিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যা অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নয়। যেমন- মুখবিবর, গলনালি, জিহ্বা, ওষ্ঠ, দত্ত, তালু, নাক ইত্যাদি। এগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় বাগ্যন্ত্র। এই বাগযন্ত্রের সাহায্যে মানুষ যে অর্থবোধক ধ্বনি সৃষ্টি করে তা-ই ভাষা। অর্থহীন কোনো ধ্বনিকে ভাষা বলা যাবে না। তাই মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে অর্থবোধক যে ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে তাকে ভাষা বলা হয়।