৯ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় : 'বাংলাদেশ' ও 'বঙ্গবন্ধু' - মানবতাবাদী ধারা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সকল সমধান - ২০২৪

Mohammed Ahsan
0
৯ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় :  'বাংলাদেশ' ও 'বঙ্গবন্ধু' - মানবতাবাদী ধারা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সকল সমধান - ২০২৪

'বাংলাদেশ' ও 'বঙ্গবন্ধু' - মানবতাবাদী ধারা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

দলগত কাজ ১

আমরা ৫ থেকে ৬ জনের দল গঠন করি। এরপর আমরা দলে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ নিয়ে আলোচনা করে একটি প্রবন্ধ/কবিতা/ছবি/দেয়ালিকা তৈরি করব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ

বঙ্গবন্ধুর হৃদয়জুড়ে ছিল মানুষ। তিনি চেয়েছিলেন মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির বিকাশ। যে শক্তির জাগরণে মানুষ উত্তীর্ণ হয় পূর্ণতার দিকে। সুপ্ত-নিদ্রিত মানুষকে জাগিয়ে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে স্বাধীন করেছেন বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি একজন মহান দেশপ্রেমিক। পাশাপাশি দক্ষ ছিলেন বক্তৃতাদানে। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় কোনো বৈষম্য দেখতে চাননি। এ বিষয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষে মানুষে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উচ্চতর আয় ও ন্যূনতম উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এতদিন ধরে বিরাজ করছিল সেটা দূর করতে হবে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো মুক্তিকামী মানুষের সামনে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা পুরো দেশবাসীকে সংগ্রামী করে তোলে। তাঁর তেজোদ্দীপ্ত বাণী 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' সর্বসাধারণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উৎসাহ দেয়।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো জীবনই সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের রাজনীতি। বাঙালি হওয়া যে গৌরবের বিষয় এই বোধ বঙ্গবন্ধুই জাগিয়েছেন বাঙালি জাতির মধ্যে। তিনি তাঁর সংগ্রাম আর ত্যাগের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বাঙালি জাতিসত্তার বিষয়ে আমাদের গর্ববোধ করতে শিখিয়েছেন। দেশ ও জনগণের জন্য হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করার মতো মনোবল তিনি সব সময় হৃদয়ে পোষণ করতেন। মৃত্যুকালেও তিনি হত্যাকারীদের আঙুল তুলে ধমক দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। তাই বঙ্গবন্ধু মহাকালের খাতায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং শতাব্দীর মহানায়ক হিসেবে চিরদিন অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবেন।

দলগত কাজ ২

আমরা পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এখন চলো আমরা একজন মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে এমন কোনো বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিষয়ক কিছু তথ্য সংগ্রহ করে নিই। সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য কয়েকটি নমুনা প্রশ্ন দেওয়া হলো।

সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রশ্নমালা

১. কেনো মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?

২. পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা কেনো প্রয়োজন ছিল?

৩. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কী ছিল?

৪. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কারা অংশগ্রহণ করেছিল?

৫. আপনি কত নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন?

৬. পাকিস্তানি সেনা আর আপনাদের যুদ্ধের কৌশলে কি পার্থক্য ছিল?

৭. যুদ্ধের সময় আপনারা অন্য এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ কিভাবে করতেন?

এরপর সাক্ষাৎকার এবং পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা যেখানে তিনি ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার দৃষ্টান্ত রেখেছেন তার একটি টাইম লাইন তৈরি করি। আমরা প্রয়োজনে নিচের টাইম লাইনের মতো করে একটি টাইম লাইন এঁকে আমাদের অনুসন্ধানের প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করতে পারি।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা
ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্যহ

০১. (১৯৪৬) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তি বজায় রাখার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

অথবা,

(১৯৪৬) নিজের জীবন বাজি রেখে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের জীবন রক্ষা করেন।

০২. (১৯৬০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ' প্রতিষ্ঠা করেন।

অথবা,

(১৯৬০) মুক্তি লাভ করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য উদ্যমী ছাত্র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ' নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

০৩. (১৯৬৬) ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

অথবা,

(১৯৬৬) শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

০৪. (১৯৭০)বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত

অঞ্চলে ছুটে যান।

অথবা,

(১৯৭০) নভেম্বরের ১২ তারিখে এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।

দলগত কাজ ৩

এখন আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়ে আলোচনা করি। এরপর আমরা 'ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়' বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। এরপর নিচের চিত্রের মতো চিত্র এঁকে পোস্টার পেপারে আমাদের করণীয়গুলো লিখে দেয়ালে টানিয়ে রাখি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের। তিরিশ লাখ মানুষের জীবনদানসহ এ দেশের স্বাধীনতার জন্য সরকারি হিসাবে লাখ, বেসরকারি হিসেবে প্রায় পাঁচ লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন, পনের লাখেরও বেশি মানুষ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দলের বিভিন্ন ঘাতক বাহিনীর হাতে নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এক কোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে প্রতিবেশী ভারতে গিয়ে শরণার্থীর বিড়ম্বিত জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য বিশ্বের অন্য কোনো দেশের মানুষ এত জীবনদান, নির্যাতন ও ত্যাগ স্বীকার করেননি। 

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এরই ভিত্তিতে এক পক্ষকাল সময়ের ভেতর '৭১-এর ১০ এপ্রিল প্রণীত হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যা ছিল নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আইনগত ভিত্তি। 

'৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নিছক একটি ভূখণ্ডে লাভ কিংবা পতাকা বদলের জন্য হয়নি। নয় মাসব্যাপী এই যুদ্ধ ছিল প্রকৃত অর্থেই মুক্তিযুদ্ধ। দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন সার্বিক মুক্তির  আশায়। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়েছিল '৭২-এর সংবিধানে।

১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যে আন্দোলনের সূচনা হয় '৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারিতে তার চূড়ান্ত রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি রফিক, জব্বার ও বরকতসহ অগণিত ভাষাশহীদের আত্মদানে। এই ভাষা আন্দোলনের পলল জমিতে বেড়ে উঠেছে নব আঙ্গিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালিত্বের পরিচয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে বেড়ে উঠলেও অচিরেই বাংলার রাজনীতিও এই চেতনায় উদ্ভাসিত হয়।

পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক পাঞ্জাবি শোষক চক্র বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক শোষণের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করেছিল। ২৩ বছরের সীমাহীন শোষণে পশ্চিম পাকিস্তানের উষর মরুভূমি হয়েছে শস্য শ্যামল এবং সোনার বাংলা পরিণত হয়েছিল শ্মশানে। বাঙালির জাতিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়েছে সত্তরের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সকল হিসাব ও চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছিল। সত্তরের নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতাকে দলের অন্যতম নীতি হি সেবে গ্রহণ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে অসাম্প্রদায়িক বাঙালিত্বের চেতনা ও সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর পক্ষপাত বিভিন্ন অধ্যায়ে বিধৃত হয়েছে। ষাটের দশকে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে বামপন্থীদের ব্যাপক প্রভাব সমাজতন্ত্রের ধারণা জনপ্রিয় করেছে। 

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা, বাঙালি জাতিসত্তার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশে গণহত্যার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে যখন বঙ্গবন্ধু '৭১-এর ৭ মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবার আহ্বান জানান। ৭ মার্চের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, 'রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বা' তারপরই বলেছিলেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' এই একটি আহ্বান সমগ্র জাতির চেতনায় minibd স্বাধীনতা ও শোষণ-পীড়ন মুক্তির যে বোধ সঞ্চারিত করে তা মূর্ত হয়েছে পরবর্তী নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে, যা ছিল সার্বিক অর্থে একটি গণযুদ্ধ। ৪ নভেম্বর (১৯৭২) গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু এক অনন্যসাধারণ ভাষণ দিয়েছিলেন। আমার মতে, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ১৯৭২-এর ৪ নভেম্বরের এই ভাষণ, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ও রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু 'গণতন্ত্র', 'সমাজতন্ত্র' ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা'র নতুন ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা দিয়েছেন। গণতন্ত্র সম্পর্কে এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন 'আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্র যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে।

বাংলাদেশ যদি একটি আধুনিক ও সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, যদি আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চায়, যদি যুদ্ধ-জেহাদ বিধ্বস্ত বিশ্বে মানবকল্যাণ ও শান্তির আলোকবর্তিকা জ্বালাতে চায় তাহলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।

ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার আমাদের করণীয়

ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে 

  • সাম্য, উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার  আদর্শ দৃঢ়ভাবে প্রচার করা।
  • নি:স্বার্থভাবে মত প্রকাশ করা।
  • মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস তুলে ধরা। 
  • সঠিকভাবে গণতন্ত্র চর্চা করা।

সামাজিক ক্ষেত্রে

  • সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা।
  • ও নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষা।
  • নিজের দেশের পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে গণমাধ্যম সমূহের সাহায্যে ব্যাপক প্রচারকার্য পরিচালনা করা।
  • বিশ্বজনমত গঠন করা।

রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে

  • দরিদ্র ও উন্নতিশীল দেশ গুলোর দিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
  • কূটনৈতিক উদ্যোগ ও আয়োজন করা।
  • রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা। 
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অধিক সম্পদের অধিকারী হওয়া।

দলগত কাজ ৪ 
বঙ্গবন্ধু মেলার আয়োজন

আমরা আগে ৫ থেকে ৬ জন মিলে যে দল গঠন করেছি, সেই দলে এবারও কাজ করব। প্রতিটি দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের যেকোনো একটি ঘটনাকে কেস স্টাডি হিসেবে নেব। সেই ঘটনা-সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে একটি নাটিকা/পোস্টার পেপার/পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করব। আমাদের তৈরি করা নাটিকা/পোস্টার পেপার/পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ২৬শে মার্চে 'বঙ্গবন্ধু মেলা'তে উপস্থাপন করব। এই মেলার আয়োজন করার জন্য আমরা বিদ্যালয়ে একটি স্থান ও সময় নির্ধারণ করব। মেলায় উপস্থিত থাকার জন্য আমরা এলাকার বিভিন্ন বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানাব। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তায় আমন্ত্রণ পত্র লিখতে পারি।

[এই কাজটি তোমরা একটি নাটিকা/ পোস্টার পেপার/ পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি যেকোনো মাধ্যমে দলগতভাবে উপস্থাপন করতে পারবে।]

বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ

পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম তাৎপর্য লাভ করে ৬ দফার স্বায়ত্তশাসনের দাবির মধ্যে। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে যোগদান করেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দফাগুলো হলো—
১. পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীন সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠান।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে মাত্র দুটি বিষয় থাকবে—প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্য সব বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
৩. সারা দেশে হয় অবাধে বিনিয়োগযোগ্য দুই ধরনের মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা প্রচলন করা।
৪. সব ধরনের কর ধার্য করার ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আঞ্চলিক সরকারের আদায় করা রাজস্বের একটা নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৫. অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে। এর নির্ধারিত অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে।
৬. অঙ্গরাজ্যগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধা সামরিক বাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া।
৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সব অধিকারের কথা তুলে ধরে। আইয়ুব খান সরকার ৬ দফাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এই ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে গভীরভাবে উজ্জীবিত করে। এটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছান এবং তার পরদিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে নিজেই ৬ ফেব্রুয়ারি এর সম্মেলন বর্জন করেন। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি সংগৃহীত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা সংবলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। যার নাম ছিল ছয় দফা আমাদের বাঁচার দাবি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীদলীয় সম্মেলনে ৬ দফা পেশ করেন। এরপর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে(প্ররাষ্ট্র/উপরাষ্ট্র)পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়।[১] বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়।

প্রতি বছর ৭ই জুন বাংলাদেশে '৬ দফা দিবস' পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া , শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি নিহত হন। ৬ দফা আন্দোলনে প্রথম নিহত হয়েছিলেন সিলেটের মনু মিয়া। ছয় দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফা ছিল। ছয় দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।

নিয়মিত সমাধান পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো দিয়েে পাশে থাকুন facebook.


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!