ষষ্ঠ শ্রেণি (ইসলাম শিক্ষা )

ধাপ-১ (প্রথম কর্মদিবস: ৯০ মিনিট) |
কাজ-১: ইসলামী শিক্ষা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং পরিবেশে দয়া, দায়িত্ব এবং উত্তম চরিত্রের উপর জোর দেওয়া । এখানে কোরান, হাদিস (নবী মুহাম্মদের বাণী ও কর্ম) এবং সদয় ও দায়িত্বশীল আচরণের বিষয়ে ইসলামিক শিক্ষামূলক গ্রন্থ থেকে কিছু মূল নীতি রয়েছে:
১। সত্যবাদিতা: সত্যবাদিতা মানবজীবনের অন্যতম সেরা গুণ। সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। সত্যবাদী লোককে সবাই ভালোবাসে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রে সত্যবাদিতার চর্চা করলে আমরা দুনিয়ায় শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাবে। রাসুল (সা.) বলেন, “তোমরা অবশ্যই সত্য কথা বলবে। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায় ।'
২। মাতাপিতার প্রতি সদাচার: মাতাপিতা আমাদের জীবনে আল্লাহর একটি বিশেষ নিয়ামত। দুনিয়াতে আসার সাথে সাথেই আমরা তাঁদের অগণিত অনুগ্রহ নিয়ে বেড়ে উঠি। এ জন্য আনুগত্য, সদাচরণ ও ভালোবাসা পাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর পরেই পিতামাতার স্থান। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।'
৩। প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার: আমরা প্রতিবেশী ছাড়া চলতে পারি না। তাঁরা আমাদের ভালো-মন্দ খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। অনেক সময় আমাদের বিপদে আত্মীয়রা ছুটে আসার আগেই প্রতিবেশীরা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তাই তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ও সদাচরণ করা এবং তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য।
৪। খয়রত এবং অভাবীদের সাহায্য করা: দাতব্য কাজ এবং অভাবীদের সাহায্য করা ইসলামী দায়িত্বের অপরিহার্য উপাদান। মুসলমানদের তাদরে সম্পদ এবং সম্পদ কম ভাগ্যবানদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় কারণ এটি সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং সহানুভূতির বোধ জাগিয়ে তোলে ।
৫ । কাজরে নীতি ও দায়িত্ব: ইসলাম কঠোর পরিশ্রম এবং কর্মসংস্থান ও দৈনন্দিন জীবনে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে। নবী মুহাম্মদ বলেছেন, 'নিজের হাতের কাজ থেকে যে খাবার খায় তার চেয়ে উত্তম খাবার আর কেউ খায় না।'
৬। শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধের সমাধান: ইসলাম বিরোধ ও দ্বন্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানকে উৎসাহিত করে। মতবিরোধ দেখা দিলে মুসলমানদের পুনর্মিলন ও মধ্যস্থতা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
৭। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা ও সংরক্ষণ: সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ, সুন্দর ও মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর এ পরিবেশ আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে এমন যেকোনো কাজ করতে ইসলামের নিষেধ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়, বিনাশ অথবা অপরিমিত ব্যবহার কোনোটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য নয়। মহানবি (সা.), পরিবেশ রক্ষায় গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে ব্যক্তি গাছ লাগায় এবং গাছের যত্ন করে তাকে বড় করে, সেই গাছের একটি ফলের হিসাবে তার আমলনামায় একটি করে নেকি লেখা হয়।
এই নীতিগুলি কোরান, হাদিস এবং বৃহত্তর ইসলামী ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সহানুভূতি, দায়িত্ব এবং নৈতিক আচরণের উপর অত্যাধিক জোর দিয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং পরিবেশে মুসলমানদের সদয় এবং দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে ।
কাজ-২: শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিবার, বিদ্যালয় বা সমাজে সদয় ও দায়িত্বশীল আচরণ কীভাবে চর্চা করেছে বা কিভাবে চর্চা হতে দেখেছে সেই অভিজ্ঞতায় গল্প লিখি:
পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ
রানা নবম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারে কেবল তার বাবা, মা ও একটি ছোট বোন রয়েছে। অনেকদিন ধরে বাবা অসুস্থ থাকায় সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের এই অবস্থা দেখে রানা গ্রামের একটি মুরগির ফার্মে কাজ নেই। সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত কাজ করে রাতে বাড়িতে এসে নিজের পড়ালেখা ও সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। পরিবারের প্রতি রয়েছে তার গভীর ভালোবাসা।
বিদ্যালয়ের প্রতি দায়িত্বশীলতা
শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করার লক্ষ্যে ৫ জন করে আমরা ৬টি দলে ভাগ হয়ে যাই। তিনটি দল শ্রেণির ভেতরে কাজ করে। আর দুটি দল শ্রেণির বাইরে কাজ করে। কাজগুলো করার সময় আমরা মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে নেই। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে যারা কাজ করে তাদের একটি দল শ্রেণির ভেতরে পড়ে থাকা নষ্ট কাগজ, পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট বা অন্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে ডাস্টবিনে রেখে দেই। অন্য দল বেঞ্চ, ব্লাক বোর্ড, পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলি এবং একদিকে সরিয়ে রাখি। অন্য দলটি শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেই। পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে আমরা সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফেলি। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রেখে সন্দর ও নির্মল পরিবেশে পড়াশোনা করি।
সত্যবাদিতা
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র । গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মামাদের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি। বাস থেকে নেমে আমি একটি জিনিস লক্ষ করলাম। রাস্তায় একটি মানিব্যাগ পড়ে রয়েছে। আমি মানিব্যাগটি হাতে নিলাম ৷ তখন মানিব্যাগটি লুখিয়ে রাখি। এসে মাকে সব খুলে বলি। মা এতে বড়ই আশ্চর্য হয় এবং মানিব্যাগে থাকা ঠিকানায় ফোন দেয়। ফোন দিয়ে লোকটিকে আশ্বাস দেয় উনার মানিব্যাগ পাওয়া গেছে এবং তার কাছে আছে। মা লোকটিকে আমাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে দেন এবং যোগাযোগ করতে বলেন ৷ মানিব্যাগে লোকটির আইডিকার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজ ছিল। যা হারিয়ে গেলে লোকটি অনেক ভোগান্তির স্বীকার হতো। লোকটি আমাদের বাসায় এলে মা তাকে মানিব্যাগটি স্বহস্তে দিয়ে দেন এবং বলেন দেখে নিতে সব ঠিক আছে কিনা। লোকটি দেখে বরই আশ্চর্য হয় । লোকটি তখন আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, সারাজীবন যেন এরূপ সততা ও নিষ্ঠাবান থাকি। লোকটি যথেষ্ট খুশি হয় এবং আমার প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ।
সত্যি কি মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত? তাহলে আমার মা যে নেই আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে 🥺😭😔😿
ReplyDelete